Advertisement
E-Paper

আমরা তো রাজুদার অ্যাসিস্ট্যান্ট

বদলে গিয়েছে শুধু নামটা, পল্টু থেকে রাজু। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলতি লব্জ এখন এটাই। মাস কয়েক আগে, হাসপাতলে অগ্নিকাণ্ডের সেই দুপুর পর্যন্ত অমল গুপ্ত ওরফে পল্টুই ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের ‘শেষ কথা’।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৮
মেডিক্যাল কলেজে টিকিট কাউন্টারে সামনে ভিড়। — নিজস্ব চিত্র

মেডিক্যাল কলেজে টিকিট কাউন্টারে সামনে ভিড়। — নিজস্ব চিত্র

বদলে গিয়েছে শুধু নামটা, পল্টু থেকে রাজু।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলতি লব্জ এখন এটাই।

মাস কয়েক আগে, হাসপাতলে অগ্নিকাণ্ডের সেই দুপুর পর্যন্ত অমল গুপ্ত ওরফে পল্টুই ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের ‘শেষ কথা’।

কংগ্রেস নেতা অমল, স্বেচ্ছাসেবার আদতে হাসপাতাল ‘শাসন’ করতেন বলে অভিযোগ কম ওঠেনি। গত অগস্ট মাসে, আগ্নিকাণ্ডে দু’জনের প্রাণহানির পরে, ছবিটা বদলে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্বে সিলমোহর দিতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল পল্টুকে। ধরা পড়ে মাস কয়েক হাজতবাসের পরে পল্টু আপাতত মুর্শিদাবাদ-ছাড়া।

সেই শূন্যস্থান ভরে দিয়েছেন রাজু। জেলা সদরের ওই হাসপাতালে এখন তৃণমূল কর্মী রাজু মণ্ডলের প্রলম্বিত ছায়া। প্রবীণ এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘নামটাই শুধু বদলে গিয়েছে, পল্টুর বদলে রাজু, হাসপাতালের লাগাম এখন তাঁরই হাতে!’’

তবে, সে লাগাম হাতে পেয়ে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ রাখার পক্ষপাতি নন রাজু। পল্টু দশ-বিশ টাকার কারবারি ছিলেন না। হাসপাতাল কর্মীদের অধিকাংশের অভিযোগ, তোলা আদায় কিংবা দূরান্তের গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীর পরিবারের উপরে খবরদারি করে দু’টাকার টিকিট বিশ-পঁচিশ টাকায় বিক্রি করার মতো অকিঞ্চিৎকর তোলাবাজিতেও পল্টুর অনুগামীদের অরুচি নেই।

অমল গুপ্ত (ডানদিকে) এবং রাজু মণ্ডল।

হাসপাতালের এক কর্মী বলছেন, ‘‘রাজু মণ্ডলের বাছ বিচার নেই। হাড়-হাভাতে রোগীর বাড়ির লোকেরও জুলুমবাজিতে ছাড় মেলে না। না দিলে রাজুর ছেলেপুলেরা চড়-থাপ্পরও মারছে বলে শুনছি।’’

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এলে প্রাথমিক ভাবে দু’টাকার টিকিট কাটাই দস্তুর। রাজুর দলবল, সাত সকালেই সেই টিকিট তুলে রাখছে। আনপড় গ্রামীণ মানুষের কাছে, ‘লাইনে দাঁড়াতে হবে না, মাল ছাড় টিকিট নাও’ বলে দশ-বিশ, মওকা বুঝে একশো টাকায় রফা করে টিকিট বিক্রি করছে তারা বলে অভিযোগ। দিন কয়েক আগে সে ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন হাসপাতালের কম্পিউটার বিভাগের এক কর্মী। তিনি বলছেন, ‘‘আপত্তি করায় জুটল সপাটে চড় জুটল। পুলিশকে জানিয়ে ছিলাম, বলল, মিটিয়ে নিন!’’

শাসক দলের রোগী সহায়তা কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন রাজু। তার আড়ালেই রাজুর রাজ্যপাট। তবে রাজু বলছেন, ‘‘আমি তৃণমূলের কোনও পদে নেই। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা যাতে ঠিকঠাক চিকিৎসা পায় তা দেখার ভার দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ওঁদের পাঠানো চিঠির কপিও আছে আমার কাছে। আর, দালাল-চক্র? সে তো আমি নিজেই ভাঙার চেষ্টা করছি।’’

হাসপাতালের পুরনো কর্মী বলছেন, ‘‘এ কথাগুলো খুব চেনা।’’ হাসপাতালের পুরনো কর্মীরা জানাচ্ছেন, জেলা সদর হাসপাতাল চত্বর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে সেজে ওঠার আগে থেকেই কংগ্রেসের রোগী সহায়তা কেন্দ্র খুলে ধমক-চমকের রাজনীতি শুরু করেছিলেন অমল গুপ্ত ওরফে পল্টু। পালা বদলের পরে তৃণমূলও হাসপাতালের এক কোণায় রোগী সহায়তা কেন্দ্র খুলে জন সংযোগের চেষ্টা করেছিল বটে, সফল হয়নি। হাসপাতালের এক পুরনো চিকিৎসক বলছেন, ‘‘সে কাজে পল্টুর ধারে কাছে আসতে সাহস করত না তৃণমূলের স্বেচ্ছা সেবকেরা।’’

তবে, তৃণমূলের অন্দরের খবর, রাজু এক সময়ে পল্টুরই অনুগামী ছিলেন। দলবদলের ঢল নামলে তিনিওএ গুটি গুটি পা বাড়িয়েছিলেন শাসক দলে। পল্টুর অনুপস্থিতির সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন তিনি।

রাতারাতি হাসপাতাল চত্বরে বাঁশের খাপলা দিয়ে রোগী সহায়তা কেন্দ্রের অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তুলে ‘দ্বিতীয় পল্টু’ হয়ে উঠতে সময়ও লাগেনি তাঁর। অনুগামীদের নিয়ে তাঁর ‘শাসনও’ শুরু হয়ে গিয়েছিল দ্রুত।

সেই শাসনের শিকার দৌলতাবাদের শওকত আলি। বলছেন, ‘‘মাকে নিয়ে এসেছিলাম। বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনের দীর্ঘ লাইন। দাঁড়াতেই এক জন এগিয়ে এসে টিকিট হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ‘একশো টাকা দে!’’ অত টাকা কোথায়, কোনও মতে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে মা’য়ের চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি।

বহরমপুরপের খাগড়ার এক মহিলার অভিজ্ঞতাও একইরকম। বলছেন, ‘‘তিরিশ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হল। আমি রোগী সহায়তা কেন্দ্রে নালিশ করব বলায়, ছেলেটি বলল, ‘ও তো রাজুদার অফিস, আমরা তো ওরই অ্যাসিট্যান্ট!’’

Murshidabad Medical College Amal Gupta Raju Mondal Extortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy