Advertisement
E-Paper

১৩০ টাকায় আধার,পুলিশ দেখেই চম্পট

আড়াই বছর ধরে জুতোর শুকতলা একরকম খুইয়েই ফেলেছেন বেলডাঙার মির্জাপুরের আসলাম সেখ। ব্লক অফিস, থেকে পঞ্চায়েতের কার্যালয়, বিধায়ক থেকে পঞ্চায়েত প্রধান— কার বাড়ি যাননি। আধার আর ধরা দেয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০১:০৭
সেই বি়জ্ঞাপন। —নিজস্ব চিত্র।

সেই বি়জ্ঞাপন। —নিজস্ব চিত্র।

আড়াই বছর ধরে জুতোর শুকতলা একরকম খুইয়েই ফেলেছেন বেলডাঙার মির্জাপুরের আসলাম সেখ। ব্লক অফিস, থেকে পঞ্চায়েতের কার্যালয়, বিধায়ক থেকে পঞ্চায়েত প্রধান— কার বাড়ি যাননি। আধার আর ধরা দেয়নি।

আসলাম বলছেন, ‘‘আধার কার্ড যেন আকাশের পাখি শোনা যা, ধরা যায় না!’’

সেই সুযোগটাই এসে গিয়েছিল একেবারে হাতের মুঠোয়। মাইকে ঘোষণা শুনে বুধবার তড়িঘড়ি সাত সকালে হাজির হয়েছিলেন সেই ইন্টারনেট কাফের সামনে। পৌঁছেই দেকেন লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে। তাঁর মতো অনেকেরই ভিড় সেখানে। অনেকে এসেছেন, লম্বাটে আধার কার্ডটাকে ডিজিটাল করাতে। ছোটখাটো ছিমছাম চেহারা দিয়ে ল্যামিনেট করিয়ে ডিজিটাইজড করাতে।

কিন্তু বেলা বাড়তেই গোল বাঁধল। চিৎকার-চেঁচামেচি আর গন্ডগোলের মধ্যেই এল পুলিশ। আর এতক্ষণ যাঁরা কম্পিউটারের সামনে বসে গম্ভীর হয়ে কার্ড তৈরি করছিল, সুযোগ বুঝে তারা সব উল্টে চোঁ চা দৌড়। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ভুয়ো আধার কার্ড চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। অচিরেই ধরা পড়বে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার, মির্জাপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়ে, নতুন আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল আধার কার্ড করিয়ে দেওয়ার লম্বা ফিরিস্তি শুনিয়ে দিয়েছিল ‘শেষ সুযোগ’-এর বিজ্ঞাপন। দিনভর ঘোষণা করা হয়েছিল মাইকেও। বলা হয়েছিল ‘সালমা হাইস্পিড ইন্টার নেট’-এ গেলেই হবে মুশকিল আসান। সঙ্গে আনতে বলা হয়েছিল ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড কিংবা প্যানকার্ড। ভিড়টা তাই সকাল থেকেই পড়েছিল দোকানের সামনে।

কিন্তু গোল বাধে টাকা চাইতেই। অভিযোগ, কার্ড পিছু ১৩০ বা তার বেশি টাকা নিয়ে রশিদও দেওয়া হচ্ছিল। এই রশিদই ছিল ছবি তোলার ছাড়পত্র।

কিন্তু কার্ড তৈরি করাতে এসে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, সরকারি কার্ড করাতে টাকা লাগবে কেন?

কার্ড তৈরি যাঁরা করছিলেন, তাঁদের জবাব ছিল, এটা তাদের পারিশ্রমিক।

কয়েক জন স্থানীয় মির্জাপুর-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নবাব শেখের কাছে যান। নবাব তাঁদের জানান সরকারি কাজে টাকা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। খবর যায় বেলডাঙা-১ ব্লকের বিডিও ও বেলডাঙা থানায়।

পুলিশ আসতে পারে সেই কথা রটতেই ওই ইন্টারনেট কাফের সামনে ভিড়টা হাল্কা হতে থাকে। আর সেই সুযোগে পালিয়ে য়ায় প্রতারকেরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ওই প্রতারণার সহ্গে জড়িয়ে রয়েছে সাত জন। তাদের চার জন বেলডাঙার কাপাসডাঙা ও মির্জাপুরের বাসিন্দা। বাকিরা মালদহের বাসিন্দা। মির্জাপুর-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আরএসপির নবাব শেখ জানান, মঙ্গলবার মাইকে প্রচার হয়েছে। তখনও কেউ তাঁদের জানায়নি। তাঁদের মনে হয়েছিল, এটা সরকারি প্রচার।

কিন্তু টাকা নেওয়া শুরু হতেই সন্দেহ শুরু হয়। বুধবার সকালে এটা নিয়ে আলোচনা হতেই টাকা নেওয়ার কথাটা তাঁদের কানে আসে। তিনি বলেন, ‘‘বুঝতে পারি এটা প্রতারকদের কাজ। সেই জন্যেই পুলিশে খবর দিই।’’

নবাব সেখ বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই আমরা লোক পাঠিয়ে ছিলাম। আমার লোকেদের প্রতারকরা যে কাগজ দেখিয়ে ছিল, তা সরকারি অনুমতিপত্র নয়। একটি বেসরকারি সংস্থার চিঠি।’’ তিনি জানান, তাঁদের কাজ বন্ধ করতে বলায় পঞ্চায়েতের লোকেদের তারা ‘যা পারিস কর’ বলে হুমকি দেয়। তার পরেই পুলিশ ডাকা হয়।

বেলডাঙা-১ ব্লকের বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে আধার কার্ড তৈরি বন্ধ রয়েছে। সেই সুযোগে এই ধরনের জালিয়াতির কাজ চলছে।’’ মির্জাপুর গ্রামের ঘটনাটি পুলিশ কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আধার কার্ডে টাকা লাগে না। সেটা ব্লক, পঞ্চায়েত বা কোনও সরকারি স্কুল থেকে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে আরও সচেতন হয় তা দেখা হবে।’’

মুশির্দাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘জেলায় প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ আধার কার্ড পেয়েছেন। বাকি দেরও সরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আধার কার্ড দেওয়া হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রতারণার জালে পা দেবেন না।’’

Police Aadhar card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy