প্রতীকী ছবি।
এক দিকে সরকারি ভাবে ২৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে আলু বিক্রি, অন্য দিকে ১ ডিসেম্বর থেকে হিমঘর বন্ধের নির্দেশের জোড়া ধাক্কায় অবশেষে বাজারে নামতে শুরু করল আলুর দাম। বেশ কয়েকমাস ধরে দাম বাড়তে বাড়তে সপ্তাহ কয়েক আগে আলুর দর পৌঁছে যায় প্রতি কিলোগ্রাম পঞ্চাশ টাকা দরে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে নানা রকম সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও সে সবের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় বাজারে আলু হাফ সেঞ্চুরি করেছিল নির্বিবাদে।
প্রতি কিলোগ্রাম চন্দ্রমুখী আলু ৫০ টাকা আর জ্যোতি আলু ৪৫ টাকা দরে কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আঁচ টের পেতেই ময়দানে নামে রাজ্য সরকার। ২৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে আলু বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু তাতেও অবস্থার বিরাট কিছু হেরফের হয়নি। কারণ আলুচাষিরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে তাঁদের কাছে আর কোনও মজুত আলু নেই। সবটাই ব্যবসায়ীদের দখলে। যাঁরা আরও লাভের আশায় বাজারে কিছুতেই আলুর জোগান স্বাভাবিক হতে দিচ্ছিলেন না। অবস্থা ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। এমন সময়ে রাজ্য সরকার ঘোষণা করে, পয়লা ডিসেম্বর থেকে সমস্ত হিমঘর বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতেই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন আলুর মুজতদারেরা। হিমঘর বন্ধ হওয়ায় তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন তাঁদের মজুত আলু ছেড়ে দিতে। তাতেই দাম কমতে শুরু করেছে আলুর। খুচরো বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এখন নিয়মিত দাম কমবে।
নবদ্বীপের এক খুচরো আলু বিক্রেতা বলেন, “আজ চন্দ্রমুখী ৪৫ এবং জ্যোতি ৪০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু পঞ্চাশ টাকা। যা শুনছি, স্টোর বন্ধ হওয়ায় এ বার বাজারে জোগানের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। ফলে আশা করছি স্বাভাবিক ভাবেই দাম আরও কমবে।”
কিন্তু এই সময় বাজারে নতুন আলুর দাম বেশি কেন? জবাবে চাষিরা জানাচ্ছেন, সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর জুড়ে এ রাজ্যে আলু বোনা চলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বার অক্টোবরের শেষের দিকে আলু চাষ শুরু করা সম্ভব হয়নি। নভেম্বর পড়তে তবে আলুর চাষ শুরু করা গিয়েছে বিভিন্ন জেলায়। অন্যান্য বার এ সময়ে বাজারে জলদি জাতের নতুন আলু উঠতে শুরু করে দেয়। এ বার সে ভাবে এখনও নতুন আলু বাজারে নেই। অন্য দিকে হিমঘরে জমা আলু বেকায়দায় পড়ে বাজারে ছেড়ে দিতেই দাম কমতে শুরু করছে।
আলুর দাম প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী প্রসূন দাস বলেন, “দু’টো কারণে এখন আলুর দাম নেমে যাওয়ার কথা। প্রথমত রাজ্য সরকারের ঘোষণা, স্টোর বন্ধ করতে হবে। ফলে খোলা বাজারে একসঙ্গে প্রচুর আলুর জোগান বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে নতুন আলু ঢুকতে শুরু করছে। যার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে।”
তবে এই সময়ে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, গত বছরের তুলনায় এ বার অনেক বেশি দামে আলুবীজ কিনতে হয়েছে চাষিদের। গত বারের তুলনায় বীজ আলুর দাম এ বার আড়াইগুণ বেশি। ফলে চাষের খরচ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন যদি বাজার নেমে যায় তাহলে ওঁরা লোকসানে পড়বেন।
হিমঘর বন্ধ প্রসঙ্গে সরকারি কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “প্রতি বছর এ সময় হিমঘর বন্ধ রাখা হয়। সব মুজত শস্য ফাঁকা করে দিয়ে জীবাণুনাশ করা হয়। যন্ত্রপাতির মেরামত হয়। আবার মার্চ নাগাদ হিমঘর চালু হয়। ফলে এই সময়ে হিমঘরে যা যা মজুত ছিল, সেই সবই বাজারে আনতেই হবে। দামও কমবে।”
বুধবার জেলার সব বাজারে আলু এবং পেঁয়াজের দাম কমবেশি কমেছে। তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সাধারণ মানুষ। তাই বাজারে ঘুরলে এখন দাম কমারই কথা মুখে মুখে ফিরছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy