Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোন তারায় লুকিয়ে বাবা?

সন্ধে নামলে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, ঠিক কোন তারাটা তার বাবা। বাবাকে সে বড্ড ‘মিস’ করে। 

সাহেবের ছবিতে মালা দিচ্ছেন বন্ধুরা। —নিজস্ব চিত্র

সাহেবের ছবিতে মালা দিচ্ছেন বন্ধুরা। —নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২৫
Share: Save:

বাবা তাকে পাহাড়কে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। বাবার হাত ধরেই ছোট্ট-ছোট্ট পায়ে প্রথম তার পাহাড়ে চড়া। সেই বাবা-কে কত্ত দিন সে দেখতে পাচ্ছে না!

পাঁচ তলা আবাসনের দক্ষিণের বারান্দা থেকে আকাশের দিকে একা-একা তাকিয়ে থাকে বছর ছ’য়েকের আদিত্য। পিসি তাকে বলেছে, ‘বাবা তারা হয়ে গিয়েছে!’ সন্ধে নামলে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, ঠিক কোন তারাটা তার বাবা। বাবাকে সে বড্ড ‘মিস’ করে।

বড্ড পাহাড় ভালবাসতেন বিশ্বরূপ সাহা। চাপড়ায় তাঁকে সকলেই চিনতেন সাহেব নামে। মা আর স্ত্রী-র হাজার অনুরোধ, নিষেধ অগ্রাহ্য করে পাহাড়ের টানে ছুটে গিয়েছিলেন চন্দ্রভাগা-১৩ শৃঙ্গ ট্রেক করতে। কৃষ্ণনগরের ‘নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর পাহাড়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েক জন সঙ্গীর সঙ্গে নীচে নামার পথে ১৯ সেপ্টেম্বর শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনাচক্রে জন্মদিনের ঠিক পরের দিনটাই হয় তাঁর মৃত্যু দিন। মৃতদেহ বাড়ি এসে পৌঁছোয় ২৩ সেপ্টেম্বর।

আদিত্য দেখেছে, বাবাকে সবাই মিলে নিয়ে এল একটা বাক্স করে। মা কাঁদল, ঠাম্মি কাঁদল। তাঁদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল সে। ‘মরে যাওয়া’ বিষয়টার প্রকৃত অর্থ বোঝার বয়স তার এখনও হয়নি। বরং পিসির কথাটই তার মনে ধরেছে। বাবা নাকি আকাশে তারা হয়ে গিয়েছে! তাই প্রতিদিন সন্ধ্যায় আদি বারান্দার গ্রিল ধরে বেশ কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। বাবাকে খোঁজে।

সাহেবের বাড়ি চাপড়ার শ্রীনগর মোড় এলাকায়। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন এই বয়সেই। পাশাপাশি নেশা ছিল পাহাড়। ছেলেকে কৃষ্ণনগরের নামী স্কুলে পড়াবেন বলে কলেজস্ট্রিট এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেই ফ্ল্যাটেই এখন বৃদ্ধা মা জয়শ্রী, স্ত্রী লক্ষ্মী আর ছেলে আদিত্য-র বাস।

চোখ মুছে লক্ষ্মী বলেন, ‘‘ছেলেটার বাবা অন্ত প্রাণ। কী করে সামলে রাখব বুছতে পারছি না। রাতে সাহেব বাড়ি ফিরলে বাপ-ছেলে মিলে মোবাইলে গেম খেলত। লেগে থাকত দুষ্টুমি। এখন মাঝে মাঝে ছেলেটা কেমন থম মেরে যায়। পুজোর সময় আমরা সবাই মিলে ঠাকুর দেখতাম। বাবার কাঁধে চড়ে বসত কখনও কখনও।’’ এ বারের পুজোয় গোটা পরিবারের সম্বল শুধু কান্না আর শূন্যতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chapra Trekking Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE