Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
সক্রিয় গোষ্ঠীর মহিলারা

ধান কিনে লক্ষ্মীলাভ

মু্র্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘এ বারে আমরা একশোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছি। ইতিমধ্যে ১৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান কেনা শুরু করে দিয়েছে।’’

ধান কিনছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তেঁতুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

ধান কিনছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তেঁতুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১২
Share: Save:

পাড়ার মোড়ে দাঁডিয়ে আছে টোটো। টোটোর মাথায় দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা রয়েছে মাইক। টোটোয় বসে মাইক্রোফোনে এক মহিলা বলে চলেছেন— ‘আগামীকাল সহায়ক মূল্যে ধান কেনার শিবির হবে। সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির জন্য সচিত্র পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্কের পাশবই, দু’কপি ছবি, মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করুন।’

মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের গুধিয়া পাকুড়তলা, দক্ষিণপাড়া কিংবা খুনিয়াপুকুর এলাকায় এ ভাবেই প্রচার করে চলেছেন তেঁতুলিয়া নতুন পথে সঙ্ঘ সমবায়ের মহিলারা। শুধু প্রচারই নয়, ট্যাব হাতে চাষিদের নাম নথিভুক্ত থেকে ধানের ওজন দেখে নেওয়ার মতো যাবতীয় কাজ সামলাচ্ছেন ওই মহিলারাই।

ওই সমবায়ের সম্পাদক আনসুরা বিবি অন্য দুই সদস্য হালিমা বিবি, ও মহিনা বিবিকে টোটোয় প্রচারে বেরোচ্ছেন। আর এক সদস্য সুফিনা খাতুন ট্যাব হাতে ধান কেনার জন্য চাষিদের নাম নথিভুক্ত ও হিসেব রক্ষার কাজ করছেন।

আনসুরা বলছেন, ‘‘গত বছর আমরা সহায়ক মূল্যে ধান কিনে প্রায় পৌনে দু’লক্ষ টাকা কমিশন পেয়েছিলাম। তাই এ বারেও চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে ধান কেনা শুরু করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কুইন্টাল ধান কিনেছি। ৩০ হাজার কুইন্টাল ধান কেনা আমাদের লক্ষ্য।’’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ধান কেনায় খুশি চাষিরাও। গুধিয়ার এক চাষি বলছেন, ‘‘মহিলারাই তো সংসার চালান। ফলে ওঁরা ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শোনেন। তারিখের পর তারিখ না দিয়ে দ্রুত ওঁরা ধানও কেনেন।’’

গত বছর নবগ্রামের শিবপুর সোনালি সঙ্ঘ সহায়ক মূল্যে ধান কিনে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা লাভ করেছিল। এ বারেও তারা ধান কিনছে। শনিবার নবগ্রামে শিবির করে ওই সঙ্ঘ ধান কেনা শুরু করল। শিবপুর সোনালি সঙ্ঘ সমবায়ের সম্পাদক কদবানু বিবি বলছেন, ‘‘কৃষকদের ধান সহজে সহায়ক মূল্যে কেনা হচ্ছে। আমাদেরও দু’পয়সা রোজগার হচ্ছে।’’

চাষিরা যাতে ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রিতে বাধ্য না হন, সে জন্য সরকার প্রতি বছর সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কর্মসূচি নেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ফড়েরা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। এমন পরিস্থিতিতে চাষিদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে ধান কিনছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। এতে মহিলাদের যেমন লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে, তেমনি কৃষকরাও সহজেই সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন।

মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর প্রায় ৩০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেলায় পাঁচটি সমবায় প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন ধান কিনেছিল। এ বারে প্রায় একশোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ধান কিনতে নামাতে চাইছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে জেলায় ১৭টি সঙ্ঘের ধান কেনার জন্য রেজিস্ট্রেশন হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলিরও দ্রুত রেজিস্ট্রেশন হবে।

মু্র্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘এ বারে আমরা একশোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছি। ইতিমধ্যে ১৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান কেনা শুরু করে দিয়েছে।’’ জেলাশাসকের দাবি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত হলে তাঁরা সহজেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেতে পারবেন। ফলে চাষিরাও বাড়ির কাছে ধান বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে গত বছর ধান কেনার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কুইন্টাল পিছু প্রায় ৩১ টাকা করে কমিশন দিয়েছে। আর সেই কমিশনে লক্ষ্মীলাভ হয়েছে জেলার পাঁচটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর। এ বারে ধান কেনার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কমিশন কত দেবে তা এখনও রাজ্য থেকে জানানো হয়নি বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Rice Trading Co-Operative
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE