E-Paper

ঊর্ধ্বমুখী পাটের দামে খুশি চাষি

পাটের বেশি দামের কারণ ব্যাখ্যা করে জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন আধিকারিক এবং পাট বিশেষজ্ঞ সাগর মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে বৃষ্টির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক কুইণ্টাল পাটের দাম ছুঁয়েছে প্রায় ৮৫০০ টাকা! মঙ্গলবার খোলাবাজারে এমনই ছিল ‘বটম’ (টিডি-৩) জাতীয় পাটের দাম। টিডি-২ বা বাজারে ‘গুড মিডল’ বা ‘মিডল’ প্রজাতির পাটের দাম ৮৭০০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। জেলার চাষিরা জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গের বাজারে ইতিমধ্যেই ওই প্রজাতির পাটের দাম ৯০০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

মাঠ থেকে উঠতে না উঠতেই খোলা বাজারে পাটের যথেষ্ট ভাল দাম পাওয়ায় পুজোর আগে বেজায় খুশি চাষিরা। এমনিতে পাট চাষে ক্রমাগত লোকসানের মুখ দেখতে দেখতে চাষে আগ্রহ হারাতে বসেছিলেন চাষিরা। ফলে নদিয়া জেলাতেও গতবারের তুলনায় অন্তত ৩০০ হেক্টর কম জমিতে এবার পাট চাষ হয়েছে। এবার কমবেশি ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চাষিদের বক্তব্য, হেক্টর পিছু ফলনও এবার তুলনায় কম। কিন্তু মরসুমের শুরুতেই ভাল দাম ওঠায় তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। লোকসান পুষিয়ে তাঁরা এবছর পর্যাপ্ত লাভের মুখ দেখবেন বলেই আশা অনেকের।

পাটের বেশি দামের কারণ ব্যাখ্যা করে জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন আধিকারিক এবং পাট বিশেষজ্ঞ সাগর মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে বৃষ্টির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য বছরে বৃষ্টির স্বল্পতা পাটচাষের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা তৈরি করে। এ বছর মরসুমের শুরু থেকেই প্রবল বৃষ্টিতে বহু ক্ষেত্রে ফলনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “বিশেষ করে অতি বৃষ্টির কারণে বিলম্ব প্রজাতির পাটে আশানুরূপ ফলন হয়নি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাটচাষ ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠছিল। জলপ্রধান ফসল পাট, বোনা থেকে জাঁক দেওয়া পর্যন্ত জলের জন্য চাষিদের খরচ এতটাই বাড়ছিল যে অনেকেই মুখ ফেরাচ্ছিলেন পাট থেকে।” বিশেষজ্ঞদের মতে সব মিলিয়ে পাট চাষের জমি এবং ফলন দুই-ই কমছিল। সাগর বলেন, “সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এবছর কমবেশি চার লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরে যার পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ লক্ষ হেক্টর।” তাঁর মতে, সে কারণেই এ বার খোলাবাজারে পাটের দর শুরুতেই চাষির মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়েছে। যদিও ব্যবসায়ীদের অনুমান, এই দাম খুব বেশি দিন নাও থাকতে পারে। যদিও জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া নির্ধারিত পাটের দাম অনেকটাই কম। সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কল্যাণ মজুমদার বলেন, “পাটের ফলন এবার প্রায় গতবারের মতোই। যদিও এখনও সব পাট কাটা হয়নি। চূড়ান্ত পর্বে পাট কাটা হলে তখনই ফলনের পরিমাণ বোঝা যাবে।”

নদিয়ার কৃষক রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “গত বছরের তুলনায় কুইণ্টাল প্রতি তিন হাজার টাকার বেশি দাম এখন। গত বছর ভাল পাট ৪২০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। কমা পাট ৩০০০ টাকায়। এবার ৭৫০০ টাকার নীচে পাট নেই।” তবে ফলন কম হলেও পর্যাপ্ত জলের কারণে পাটের গুনগত খুবই ভাল। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার চাঙ্গা বলে মনে করছেন অনেকে। জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “এবার প্রচুর বৃষ্টিতে নিচু জমিতে জল দাঁড়িয়ে ফলনের কিছু ক্ষতি করেছে। কেননা জাঁক দেওয়ার কথা ভেবে অনেকেই নিচু জমিতে পাট চাষ করেন। তাঁরা সমস্যা পড়েছেন।”

রাজ্যের এবং নদিয়া জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসলের দাম ভাল হলে তার প্রভাব সার্বিক ভাবেই বাজারের উপর পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jute

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy