Advertisement
E-Paper

বাবাকে হারানোর ভার ছেলেকেই দিল তৃণমূল

এক পিতার কাছে চ্যালেঞ্জ, ছেলেকে হারানো। আর একজনের চ্যালেঞ্জ, ছেলেকে জেতানো। বেলডাঙায় অলোক ঘোষ আর সুজিত মুখোপাধ্যায়, দুই পিতাকে এমনই দুই বিপরীত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। ছেলে রাজা ঘোষ আবার মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০০:২৪
তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লেখা চলছে। তদারকি করছেন রাজা ঘোষ।

তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লেখা চলছে। তদারকি করছেন রাজা ঘোষ।

এক পিতার কাছে চ্যালেঞ্জ, ছেলেকে হারানো। আর একজনের চ্যালেঞ্জ, ছেলেকে জেতানো। বেলডাঙায় অলোক ঘোষ আর সুজিত মুখোপাধ্যায়, দুই পিতাকে এমনই দুই বিপরীত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল।

ছেলে রাজা ঘোষ আবার মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি। গত ২৮ মার্চ বহরমপুর রবীন্দ্রসদনের দলীয় কর্মী সম্মেলন থেকে বেলডাঙার সাত নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থীকে জিতিয়ে নিয়ে আসার যাবতীয় দায়িত্ব রাজা ঘোষের উপরে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন। যদিও তিনি ভালই জানেন, ওই ওয়ার্ড থেকেই বিজেপি প্রার্থী রাজার বাবা অলোক ঘোষ।

এ ভাবে বাবার বিরুদ্ধে ছেলেকে লড়িয়ে দেওয়া যে সচেতন ভোটকৌশল, সে ব্যাপারে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের অন্যতম পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন লুকোছাপা করলেন না। তাঁর কথায়, “ওই ওয়ার্ড থেকে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব রাজাকে বিশেষ ভাবে দেওয়া হয়েছে। কারণ, পরিবারের সদস্য হিসেবে রাজা যেমন তার বাবার দুর্বলতার দিকটি জানবে, বহিরাগত কারও পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। আমরা ওই দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে চাইছি।” আর বাবাকে হারানোর সেনাপতি রাজা বলেন, “আমি ওই ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীকেই পরাজিত হিসেবে দেখতে চাই। রাজনীতির আঙিনায় বাবা হিসেবে নয়, আমি প্রার্থী হিসেবেই তাঁকে দেখছি।”

কী বলছেন অলোকবাবু? তাঁর কথাতেও চ্যালেঞ্জের সুর। বললেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে তৃণমূল তাদের প্রচারের দায়িত্ব আমার সন্তানকে দিয়েছে। তাতে আমাকে হারানো সহজ হবে বলে মনে করছে। আমাকে পরাজিত করার বড় অস্ত্র হিসেবে ছেলেকে ব্যবহার করাটা এলাকার মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না।’’ তবে কি এ বার ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের উপর ছায়া ফেলবে ভোট? অলোকবাবু অবশ্য সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, “রাজা আমার সন্তান হলেও তার মতাদর্শ আলাদা। সে তার দলীয় আদর্শ নিয়ে লড়বে। আমি আমার আদর্শের কথা মানুষকে বলব। এতে ছেলে-বাবার সম্পর্কের মধ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না।”

প্রচারে ব্যস্ত রাজাবাবুর বাবা তথা বেলডাঙা পুরসভার বিজেপি প্রার্থী অলোক ঘোষ।

তবে মুখে তিনি যা-ই বলুন, কাজে এটা অলোকবাবুর কাছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। বর্তমানে বেলডাঙা শহর বিজেপি সভাপতি অলোকবাবু ১৯৬৭ সালে বেলডাঙা-১ ব্লকে জনসংঘের প্রতিষ্ঠিতা সদস্য। পরে আশির দশকে বিজেপি দল তৈরি হওয়ার সময় থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ বছর তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০০৫ এবং ২০১০ সালের পুরভোটে বেলডাঙার ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়লাভ করেন তিনি। ওই আসনটি এ বছর মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় দল তাঁকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করেছে।

ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী দীন মহম্মদ শেখ, সিপিএমের স্বপন মুখোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের কিশোর ভাস্কর লড়বেন। সব মিলিয়ে ওই ওয়ার্ডে চতুর্মুখী লড়াই হবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১১৬ জন।

তবে আর এক বাবা-ছেলে যুগল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলেরই অন্দরে। বেলডাঙা শহর তৃণমূলের সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়কে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী সুজিতবাবুর ছেলে সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, নিজের ছেলেকে জেতানোর জন্য সুজিতবাবু যদি ওই ওয়ার্ড থেকে বের হতে না পারেন, তাহলে বাকি ওয়ার্ডগুলিতে প্রচারের দায়িত্ব কে নেবে? শহর তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে উচিত দলীয় প্রার্থীদের হয়ে বাড়তি প্রচারের দায়িত্ব তাঁর নেওয়া।

কী বলছেন সুজিতবাবু?

তাঁর ব্যাখ্যা, ওটা বকলমে আমারই আসন। ফলে ওই আসনে আমাকে বাড়তি দায়ত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন ইনন্দ্রনীলবাবু। তবে শহর কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে আমি বাকি ওয়া়র্ডগুলিও দেখব।’’

তবে অলোকবাবুর চ্যালেঞ্জ, ছেলেকে হারানো। “আমি জানি না আমার ছেলেকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে তৃণমূল কতটা বলাতে পারবে,’’ বললেন অলোকবাবু। ‘‘তবে আমি যদি হেরে যাই, তাহলে আমার মতাদর্শের পরাজয় ঘটবে,” মনে করেন ওই বিজেপি প্রার্থী। একটু থেমে স্পষ্ট করেই বললেন, “ছেলের জয় মেনে নিতে আমার কষ্ট হবে।”

ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

Raja Ghosh Aloke Ghosh beldanga Subhasis Syed TMC CPM BJP Congress trinamool municipal election Baharampur Indranil Sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy