Advertisement
E-Paper

আগুনের ছায়ায় উধাও ভিড়

হাসপাতালে ঢুকতেই হোঁচট খেতে হল। ভুল করে অন্য কোথাও চলে এলাম নাকি! কোথায় সেই রোগীদের ভিড়? উধাও অন্য হাসপাতাল থেকে আসা গাড়ির সারি। শনিবার অগ্নিকাণ্ডের জেরে আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ১৭ জন। চিকিৎসাধীন রোগীদের চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৪
পুলিশে ছয়লাপ হাসপাতাল চত্বর। ইনসেটে, মেডিক্যাল কলেজের পোড়া ঘরে চলছে তদন্ত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

পুলিশে ছয়লাপ হাসপাতাল চত্বর। ইনসেটে, মেডিক্যাল কলেজের পোড়া ঘরে চলছে তদন্ত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

হাসপাতালে ঢুকতেই হোঁচট খেতে হল।

ভুল করে অন্য কোথাও চলে এলাম নাকি!

কোথায় সেই রোগীদের ভিড়? উধাও অন্য হাসপাতাল থেকে আসা গাড়ির সারি।

শনিবার অগ্নিকাণ্ডের জেরে আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ১৭ জন। চিকিৎসাধীন রোগীদের চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু রবিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিড়টা যেন ভোজবাজির মতো উবে গিয়েছে।

এক সপ্তাহ আগের রবিবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ২৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন এই হাসপাতালে। এ দিন রোগী ভর্তির সংখ্যা দেড়শোর ছাড়ায়নি। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলছেন, ‘‘হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে হয়তো হাসপাতালমুখো হননি। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা আগের মতই স্বাভাবিক।’’

জেলার একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার কারণ জানতে রাজ্য সরকার তদন্তের ভার তুলে দিয়েছে সিআইডি-র হাতে। এ দিন সিআইডি-র কর্তারা আসার অনেক আগে থেকেই গোটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে যায়। ছুটির দিনে হাসপাতালে রোগী ও রোগীর বাড়ির পরিজনদের থেকে পুলিশের ভিড়ই যেন বেশি ছিল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, লালবাগ-কান্দি-ডোমকল-জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল, বেলডাঙা-আমতলা-ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতাল এবং গোধনপাড়া-হরিহরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ দিন মাত্র ২৫ জন রোগী এসেছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অন্যান্য দিন ওই রেফার হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা থাকে এর তিন গুণ।

অন্য দিন যেখানে হুটারের শব্দ হাসপাতালের গেট পার হলেই অ্যাম্বুল্যান্স মনে করে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যেত স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ দিনও হুটার বেজেছে। তবে সেটা অ্যাম্বুল্যান্সের নয়, পুলিশ কর্তাদের গাড়ির। হাসপাতালে ঢোকার ক্ষেত্রেও এ দিন মাত্রাতিরিক্ত কড়াকড়ি ছিল। এমনকী ডিজিটিং আওয়ার্সের আগে চিকিৎসক-পড়ুয়াদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

শনিবারের ঘটনায় জখমদের ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না বলেও এ দিন অভিযোগ উঠেছে। দৌলতাবাদ থানার আউলিয়া বিবি গত চার দিন ধরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার তিনিও তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে সিঁড়িতে পড়ে যান। তাঁর মেয়ে লালবানুর অভিযোগ, ‘‘মায়ের মুখে ও কানে গুরুতর আঘাত লাগে। ঘটনার পর থেকে কথা বলতে গেলেই কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। কিন্তু মাকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছে।’’

একই অভিযোগ রানিনগরের চরদুর্গাপুরের সারথী মণ্ডলের। তিনি জানান, মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে ছেলে চিরঞ্জিত মণ্ডল হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনার পরে এ দিন তাঁকে কোনও ওষুধ-ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়নি। পায়ে এক্স-রে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা-ও হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর সময়ে জল দোতলার জানালা বেয়ে এক্সরে বিভাগেও ঢোকে। কোনও ভাবে ভেতরে জল ঢুকে গেলে শর্ট-সার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সারা দিন এক্সরে মেশিন চালানো হয়নি।

তার মধ্যেই শনিবার রাতেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে থাকা তৃণমূলের একটি রোগী সহায়তা কেন্দ্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভি়ড় কম হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে রেফার হওয়া রোগীরা গেলেন কোথায়? জেলার মহকুমা ও গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের হাসপাতালে এ দিন অন্য দিনের মতোই ভিড় ছিল। প্রয়োজন বুঝে তাঁরা বহরমপুরে মেডিক্যাল কলেজেও রেফার করেছেন। তবে রোগীর পরিজনেরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে না নিয়ে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের জানার কথা নয়।

Murshidabad Medical College Murshidabad CID Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy