Advertisement
০৫ মে ২০২৪
কারখানার দরজা খুলতেই মিলল বস্তা
Drug Trafficking

আগুন লাগলেও ব্রাত্য ছিল দমকল

নওদার চিনা-যোগ হাতড়ে, ছাইয়ের আড়ালে এ দিন লুকিয়ে থাকা আরও তথ্য উঠে এল সিআইডি’র হাতে।

কারখানার ভিতরে ঢুকতে দিনভর এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন লোকজন।

কারখানার ভিতরে ঢুকতে দিনভর এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন লোকজন।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৮:৫০
Share: Save:

অঝোর বৃষ্টি, ঝাপসা হয়ে এসেছে মধুপুরের চারকোল কারখানা। কে জানত, সার দিয়ে খান ছয়েক সাদা টাটা সুমো কারখানার গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর খানিক পরেই বৃষ্টির সেই অস্পষ্টতা কাটিয়ে কারখানার অন্দরের ‘কাহিনি’ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে বুধবার দুপুরে।

নওদার চিনা-যোগ হাতড়ে, ছাইয়ের আড়ালে এ দিন লুকিয়ে থাকা আরও কিছু তথ্য উঠে এল সিআইডি’র হাতে।

কারখানার আনাচ কানাচ হাতড়ে যেমন খোঁজ মিলল ‘অক্টোপাস অ্যাগ্রো বায়ো-ন্যাচারালস্ প্রাইভেট লিমিটেড’ লেখা ধূসর বস্তার তেমনই মিলল, চিনা হরফে লেখা প্যাকেটবন্দি খাবারের। তার মধ্যে শাকসব্জির সঙ্গেই মিলল প্যাকেটজাত কাঁচা মাংসও। রান্নার অপেক্ষায় যেন সদ্য নিয়ে আসা হয়েছে। কারখানার জনা পঁচিশেক কর্মী জানিয়েছেন, ‘চিনা সাহেব’রা কলকাতা থেকে আনা ওই খাবারই খেতেন। এমনকী পানীয় জলের প্রশ্নেও তাঁরা সমঝোতা করতেন না। নিয়মের কোনও তোয়াক্কা না করেই তাই কারখানার মধ্যেই বসানো হয়েছিল ভূগর্ভস্থ নলকূপ।

কারখানার এক পুরনো কর্মী বলছেন, ‘‘বাইরের জগতের সঙ্গে যতটা সম্ভব যোগাযোগ না রাখারই পক্ষপাতী ছিলেন কর্তারা।’’ আর তাই কারখানায় আগুন লাগলেও দমকলে খবর না দিয়ে মরিয়া হয়ে নেভাতে হয় চিনা কর্তাদেরই। কেন? সিআইডির এক কর্তা বলছেন, ‘‘বাইরের জগতের সঙ্গে আড়াল রাখাই ছিল ওদের উদ্দেশ্য। কিন্তু কেন এত রাখঢাক, সেটাই প্রশ্ন।’’

ওই কারখানায় জনা পঁচিশেক কর্মী কাজ করতেন তিনটি শিফটে। রোজ মিলত তিনশো টাকা। তবে তাঁদের টানা কাজের সুযোগ মিলত না, ৩০ থেকে ৪৫ দিন কাজ করার পরেই ছাঁটাই করে দেওয়া হত। তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে দেখানো হত পুলিশের ভয়। তবে স্থানীয় থানাকে কখনও এ ব্যাপারে নাক গলাতে হয়নি। কিন্তু ওই শ্রমিকেরা কী কাজ করতেন কারখানায়?

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, পাটকাটি জোগাড় করা, ছাই বস্তাবন্দি করা, কিংবা ট্রাকে তোলা— মূলত এই আটপৌরে কাজই করতেন তাঁরা। শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, অনেক সময়েই বস্তা অর্ধেক ভর্তি করতে বলা হত তাঁদের। বাকি কাজ হত ওই ‘বন্ধ ঘরে’। সেখানে স্থানীয় শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না।

তবে, শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়িও ছিল ঢের। আধার এবং ভোটার কার্ড দেখে তার পরেই নিয়োগ হত কারখানায়।

তবে, ওই শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, রাতে কারখানার চেহারা বদলে যেত। দেশি-বিদেশি গাড়ি আসত অনেক। সে গাড়িতে বন্দুকধারী নিরাপত্তা কর্মীও থাকত। কারখানার আশপাশে কাউকে ঘেঁষতেও দেওয়া হত না তেমন।

স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৫ সালে ওই চারকোল কারখানাটি তৈরি হয়। তার আগে এখানে ছিল আটপৌরে এক ইটভাটা। প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপরে ওই কারখানার পাশেই ছড়ানো কলাবাগান। মূল জমির ডান দিকে চারকোলের কারখানা। জমির বাম দিকে রয়েছে পাঁচ খানা ঘর। ঘরের মধ্যে কোনও জানলা নেই। চারটে এসি মেশিন লাগানো রয়েছে ঘরের ভেতরে। তবে, এ সব তথ্যই এত দিন ছিল পাঁচিলের আড়ালে। সেই সব কূহকে ঢাকা অজানা তথ্যই এ দিন সামনে এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Illegal Drug Trade Drug Trafficking Beldanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE