মাছ বাজার মানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পরিবেশবিদরাও বলেন, মাছ বাজার থেকে ছড়ায় রোগ সৃষ্টিকারী নানান জীবানু। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চলেছে কল্যাণীর প্রধান মাছ বাজারটি। বদলে যাচ্ছে তার সাবেকি চেহারা।
শুধু চেহারাই নয়, বদলে ফেলা হচ্ছে তার খোল নলচেও। আর কিছুদিনের মধ্যেই সেটিকে ঝা চকচকে শপিংমলের মাছ বাজার বলে মনে হতে পারে। কারণ, সেটিকে পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক হিমঘরও। সেখানে মাছের সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণ করা যাবে ফল-ফুল-সবজি। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি তৈরি হচ্ছে রাজ্য সরকারের সংস্থা বেনফিশ-এর অর্থে। পুরো প্রকল্পটির জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। কলকাতার পর দক্ষিণবঙ্গে এই ধরণের মাছ বাজার এই প্রথম। শিলিগুড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি মাছ বাজার রয়েছে। সেটিও বেনফিশেরই অর্থ সাহায্যে তৈরি হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁদের দীর্ঘদিনের চেষ্টা সফল হচ্ছে।
কল্যাণী বি ব্লকের ২ নম্বর বাজারটি শহরের সবথেকে বড় বাজার। এখানকার মাছ বাজারটিও অনেক বড়। শহরের প্রায় সব প্রান্তের মানুষ এই বাজারে আসেন। ফলে বাজারটিতে প্রতিদিন বহু টাকার ব্যবসা হয়। আর পাঁচটা মাছ বাজারের সঙ্গে এখানকার মাছ বাজারটির বিশেষ পার্থক্য নেই। সেই একই জল কাদার পরিবেশ।
কল্যাণী পুরসভার পুরপ্রধান সুশীল তালুকদার বলেন, ‘‘এই বাজারটিকে উন্নত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। কিন্তু মাছ বাজারের পুরো খোলনলচে বদলানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তার প্রধান অন্তরায় অর্থ। পুরসভার হাতে অত টাকা নেই। আমরা বেনফিশের কাছে আবেদন করেছিলাম। তারা বাজার দেখে সন্তুষ্ট হয়ে প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। সাড়ে চার কোটির সামান্য বেশি টাকা তারা দিচ্ছে। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তা চালু হয়ে যাবে।’’
পুরসভার কাউন্সিলর বলরাম মাজি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে মাছ বাজারটিকে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে। মাছ বাজারের পরিবেশ অনেক উন্নত হবে। আর যেখানে সেখানে জল-কাদা, মাছের বর্জ্য পড়ে থাকবে না।’’ তিনি জানিয়েছেন, নিকাশি থেকে শুরু করে বিক্রেতাদের বসার ব্যবস্থা, সবই আধুনিক করা হচ্ছে। এর ফলে শহরের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। বাজারের পরিবেশ অনেক স্বাস্থ্যকর হবে।
পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অত্যাধুনিক একটি হিমঘর বাজারের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। অবিক্রিত মাছ, সবজি, ফুল, ফল বিক্রেতাদের কাছে চরম সমস্যা। সেগুলি সংরক্ষণ করা গেলে লোকসান ঠেকানো যেত। শুধু তাই নয়, সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন বেশি করে মাছ-ফুল-ফল কিনে রাখতে পারেন না। ফলে উৎসব বা বিয়ের মরসুমে বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে হয়। ফলে দামে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না। সেই সমস্যা সমস্যারও সমাধান এবার হতে চলেছে।
বেনফিশের অর্থ সাহায্যে বাজারের ঠিক পিছনে তৈরি করা হচ্ছে একটি বহুমুখী হিমঘর। তার জন্য জায়গা দিচ্ছে পুরসভা। এই হিমঘরের ধারণ ক্ষমতা ২০০ মেট্রিক টন। এখানে শুধু এই বাজারের ব্যবসায়ীরাই নন, ব্যবহার করতে পারবেন, অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীরাও। তার জন্য তাঁদের ভাড়া দিতে হবে। কল্যাণী এমনিতেই সাজানো-গোছানো শহর। নতুন শীতাতপ বাজারটি শহরের গর্বের টুপিতে নতুন পালক হবে বলেই মনে করছেন শহরের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy