Advertisement
২৩ মে ২০২৪

‘ক্রাইম ব্রাঞ্চ’ বলে পাকড়াও তরুণী

কালো রোদচশমা কপালে তুলে গটগট করে হেঁটে তরুণীটি সামনে এসে দাঁড়ালেন— ‘‘আই অ্যাম সুফিয়া সুলতানা। ক্রাইম ব্রাঞ্চ। আমাদের কাছে খবর আছে, আপনার বাড়িতে ড্রাগ আছে।’’

ধৃত সুফিয়া সুলতানা। —নিজস্ব চিত্র

ধৃত সুফিয়া সুলতানা। —নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

দামি গাড়িটা আস্তে করে এসে ঘষটে থেমেছিল বাড়ির সামনে।

ঘট করে দরজা খুলে নেমে এলেন এক তরুণী। পরনে পরনে ঝকঝকে কোট-প্যাণ্ট-টাই।

সকাল ৯টা। সবে ধুপধুনো দিয়ে বাড়ির নীচে হার্ডঅয়্যারের দোকানটা খুলেছেন মিজানুর।

কালো রোদচশমা কপালে তুলে গটগট করে হেঁটে তরুণীটি সামনে এসে দাঁড়ালেন— ‘‘আই অ্যাম সুফিয়া সুলতানা। ক্রাইম ব্রাঞ্চ। আমাদের কাছে খবর আছে, আপনার বাড়িতে ড্রাগ আছে।’’

শুধু মুখের কথা নয়। ‘গভরর্মেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা অশোকস্তম্ভ সাঁটা সার্চ ওয়ারেণ্ট বের করে মুখের সামনে ধরলেন তরুণী। অচেনা মুখ নয়। বলতে গেলে, পাড়ারই মেয়ে। সে-ই হঠাৎ ‘ক্রাইম ব্রাঞ্চ’ হয়ে উঠে বাড়িতে চড়াও হবে, কে জানত।

রানিনগরের ধর্মতলা এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুরের কথায়— ‘‘টিভি আর সিনেমা বাদে কোনও দিন গোয়েন্দা-টোয়েন্দা দেখিনি। তাই প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু সীমান্তের বাজারে ব্যবসা করলেও সৎ পথে করি। ও সব কিছু আমার বাড়িতে থাকবে না।’’

সামলে নিয়ে মিজানুর তরুণীকে বলেন, ‘‘যান, গোটা বাড়ি খুঁজে দেখুন।’’ ঘণ্টাখানেক বাড়ির আনাচ-কানাচ তন্নতন্ন করে খোঁজেন তরুণী। মিজানুরের অভিযোগ, এই সময়েই এক ফাঁকে তাঁদের গুদামে কিছু ফেলে দেন তরুণীটি। তার পরে তাঁর স্ত্রীকে ডেকে সেটি তোলান।

কী সেই জিনিস?

তিন প্যাকেট ব্রাউন সুগার! যা নাকি জিভে ঠেকিয়েই তরুণী বলে দেন— ১০০ শতাংশ খাটি! ফ্যাকাশে হয়ে যায় মিজানুরদের। তাঁর স্ত্রীর দশ আঙুলের ছাপ তৎক্ষণাৎ নিয়ে নেন তরুণী। গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিংও করে রাখেন।

বাড়িতে কান্নার রোল ওঠে। কিন্তু পরে ঘরে গিয়ে কথায়-কথায় তরুণী জানিয়ে দেন, ১০ লাখ টাকা দিলে তিনি বিষয়টা মিটিয়ে দিতে পারেন। ভেবে দেখার জন্য সময় দেন সন্ধ্যে পর্যন্ত। ইতিমধ্যে মিজানুর ফোনাফুনি শুরু করে দেন। তাঁর আত্মীয় মহম্মদ শাহানুর আলম পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুনেই মনে হয়েছিল, গণ্ডগোল আছে। তাই পাঁচ লাখ টাকার টোপ দেওয়া হয়।’’

রাতে দামি গাড়ি নিয়েই ফের টাকা নিতে মিজানুরদের বাড়িতে আসেন তরুণী। পুলিশ অপেক্ষাতেই ছিল। তরুণীকে পাকড়াও করে গাড়িটিও আটক করে তারা। শনিবার আদালতে তোলা হলে তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশের অনুমান, তিনি একটা বড় চক্রের সঙ্গে জড়িত।

তরুণীর বাড়ি রানিনগর বাজারেই। ব্যবসায়ীর বাবার এক মাত্র মেয়ে সে। বাড়ির লোকে জানে, সিঙ্গাপুরে একটি কলেজে এমবিএ পড়েন তিনি। তার খরচ বাবদ প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা খরচও করে ফেলেছেন তাঁর বাবা কুদ্দুস আলি। তিনি বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়ে যখন যা বলেছে, তাই করেছি। কিন্তু এখন তো কিছুই বুঝতে পারছি না, ও কী করছে!’’

কেন ঘটালেন এমন কাণ্ড?

তরুণী বলেন— ‘‘আমি একটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ সংস্থার ছাত্রী। তাই বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fraud crime brunch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE