প্রতীকী ছবি।
বিষ্ণুপুরের এপাড়ায় অনামি ক্লাব। আর ওপাড়ায় আমরা ক’জন। দুই ক্লাবের মধ্যে দূরত্ব বড় জোর ৫০০ মিটার। সারা বছর ওই দু’টি ক্লাবের মধ্যে গলায় গলায় ভাব থাকলেও প্রতি বছর পুজো এলেই দু’টি ক্লাবের মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ বাধে। দু’পক্ষই নিজস্ব ‘গোয়েন্দা’ লাগিয়ে অপর পক্ষের ‘থিম’ চুরির চেষ্টা করে। উদ্দেশ্য একটাই—‘ওরা আমাদের টেক্কা দিয়ে দেবে না তো!’ মহালয়া পর্যন্ত এই আতঙ্কে ভুগতে থাকেন গায়ে গায়ে লেগে থাকা দু’টি পাড়ার পুজো কমটির কর্তারা।
এই আতঙ্ক অবশ্য ২৫ বছর আগেও ছিল না। কারণ, বিষ্ণপুর অনামি সঙ্ঘ ওই তল্লাটে একাই রাজত্ব করেছে। একছত্র রাজত্বে ভাগ বসাতে ২৪ বছর আগে উদয় হয় আমরা ক’জন। এখন অনামি সঙ্ঘের পুজোর বয়স ৬৭ বছর। প্রৌঢ়ত্বের ছাপ পড়েছে সেই পুজোর আয়োজনে। কিন্তু মানতে নারাজ পুজো কমিটির কর্তারা। তাঁরা নিজেদের পুজোকে চির তরুণ, চির সবুজ হিসাবেই দেখাতে পছন্দ করেন এখনও।
আমরা ক’ জনের যুগ্ম সম্পাদক উৎপল চৌধুরী ও দীপঙ্কর চৌধুরী। তাঁর দু’ জনেই বলছেন, ‘‘প্যাগোডা আকৃতির পুজো মণ্ডপ গড়া হয়েছে সবুজ ঘাস দিয়ে। নাটমন্দির, প্রবেশ পথ সবেতেই সবুজ ঘাসের আস্তরণ। এমনটা এ বার বহরমপুর শহরে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।’’ নিজেদের ‘থিম’ লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন বলে প্রতিমাতেও অদ্বিতীয়ার শিরোপার দাবি তুলেছেন তাঁরা। পুজো কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অমিত দত্তের চ্যলেঞ্জ, ‘‘আমাদের দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিক মিলে ৫ ঠাকুরের প্রতি জনের এ বার ৫টি করে বাহন। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রতীক এরা। এই থিম এ বার বহরমপুর শহর খুঁজে কোথাও মিলবে না।’’
সেই গর্বের বেলুনে পিন ফুটোতে এক মুহূর্তও দেরি করেননি পাশের অনামি ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি ভাস্কর বাজপেয়ি। তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের মণ্ডপের ঘাসে হাত দিয়ে দেখেছেন? সবই তো কৃত্রিম ঘাস। আরে চির নবীন, চির সবুজ থাকবি তো কৃত্রিম ঘাস কেন!’’ ভাস্কর বলেন, ‘‘মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সব কিছুতেই লোকশিল্পের নিবিড় ছোঁয়া রয়েছে। বহরমপুর শহরে এ বার মণ্ডপের এই অলঙ্করণ জেল্লা অন্যত্র মিলবে না।’’ তাই তাঁর দাবি, ‘‘অন্যবারের মতো এ বারও দেখবেন সেই মণ্ডপ সজ্জা দেখতে মানুষের ঢল নামবে।’’ আমরা ক’জনের তোতন পাণ্ডের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের ২৬ ফুট উচ্চতার ঠাকুর না দেখে দেখবেন কেউ বাড়ি ফিরবেই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy