Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বাজারে আগুন

ইফতারের ফলে পুড়ছে হাত

বাহারি প্যাকেটে মোড়া গাঢ় বাদামি রঙের খেজুর। খোদ আরব মুলুক থেকে জাহাজে সওয়ার হয়ে এসেছে। রমজানের বাজারে সেই খেজুর অচিরেই বিকোবে এমনই আশা ফল কারবারিদের।

রমজান মাস পড়তে মোড়ে মোড়ে এখন এমনই ছোট ছোট ফলের দোকান। ডোমকলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

রমজান মাস পড়তে মোড়ে মোড়ে এখন এমনই ছোট ছোট ফলের দোকান। ডোমকলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৭:১৮
Share: Save:

বাহারি প্যাকেটে মোড়া গাঢ় বাদামি রঙের খেজুর। খোদ আরব মুলুক থেকে জাহাজে সওয়ার হয়ে এসেছে। রমজানের বাজারে সেই খেজুর অচিরেই বিকোবে এমনই আশা ফল কারবারিদের। রমজানের সময় আরবি খেজুর চেখে দেখার সাধ রয়েছে ধনি-দরিদ্র সকলেরই। কিন্তু সবার সে আশা পূরণ হওয়ার নয়। অন্তত বাজার দর তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সারা দিনের রোজার নিরম্বূ উপোস। ধর্মীয় সংযমের অনুশীলন বলে কথা। তবু, ওই সুদৃশ্য খেজুর দেখে বুঝিবা জিভে জল চলে এসে গেল লালগোলার মল্লিকপুরের সারজেমান শেখের। ২০০ গ্রামের সেই ছিপছিপে প্যাকেট হাতে তুলে নিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করতেই বহরমপুর শহরের কোর্ট-মার্কেটের ফল বিক্রেতা সুকুমার দে-র সটান জবাব—‘‘২০০ গ্রাম ৫০ টাকা। ৫০০ গ্রামের প্যাকেট ২০০ টাকা।’’

দাম শুনেই সারজেমান প্যাকেটটা নামিয়ে রাখলেন। মুখ দেখে মনে হল, দামের আগুনে তাঁর হাতে ছ্যাঁকা লেগেছে। জিভের জলও শুকিয়ে কাঠ। অগত্যা ৮০ টাকা কেজি দরের রসহীন রাজস্থানের খেজুর নিয়েই ব্যাজার মুখে তিনি বাড়ির পথ ধরলেন।

অন্য সময় ধর্মে মতি তেমন না থাকলেও হাইস্কুল শিক্ষক আশরাফ রাজবি সারা রমজান মাস রোজা রাখেন। তাই, শুক্রবার বেশ বেলার দিকে ইফতারির ফল কিনতে গোরাবাজারের বাড়ি থেকে ব্যাগ হাতে পৌঁছেছেন বহরমপুরের ফলপট্টিতে। তাঁর ইচ্ছা, এ দিন আর চায়না, বা কাশ্মিরি আপেল নেবেন না। নেবেন পোশাকে মোড়া ওয়াশিংটনের আপেল। দাম শুনে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। ১৮০ টাকা কেজি। অগত্যা সেই চিনা। যাই হোক, তবুতো বিদেশি।

কান্দি পুরাতন বাস স্ট্যান্ডের ফল ব্যবসায়ী নিশীথ মণ্ডলও রেস্ত বুঝে খদ্দেরদের সোজা পথ বাতলে দিচ্ছেন। তেমন খদ্দেররা ওয়াশিংটন চাইলে তিনি হাসি মুখে বলছেন, ‘‘তার বদলে চায়না নিন। ১৪০ টাকা কেজি, আর কাশ্মীরি ১০০ টাকা।’’

রমজানের সময় ফলের চড়া দর প্রতি বছরের বাঁধা কিস্‌সা। এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়। সে বহরমপুর হোক বা কান্দি, বেলডাঙ্গা হোক বা জঙ্গীপুর—দর প্রায় সর্বত্র একই রকম। শশা ৩০ টাকা কেজি, কমলা লেবু প্রতি পিস ২০ টাকা, মুসাম্বি ১২-১৪ টাকা পিস, নাসপাতি ২৫০ টাকা কেজি, বেদানা ১৬০ টাকা কেজি। বাজার করতে এসে হিসেবি এক শিক্ষক বললেন, ‘‘হাত দিলেই তালু পুড়ছে। দামের যা বহর!’’

পিছিয়ে নেই শুকনো ফলের দামও। কাজু ৮০০ টাকা কেজি, চেরি ১১০ টাকা কেজি, আঙুর ৩০০ টাকা কেজি, বেঙ্গালুরর তরমুজ ২৫-৩০ টাকা কেজি, খোরমা ২৫০ টাকা কেজি, পাকা পেঁপে ৬০-৮০ টাকা কেজি, আমসত্ত্ব ১৫০ টাকা কেজি, আনারস ৪০-৫০ টাকা পিস। ফলে ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই সাধ্যে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।

কিন্তু রোজার উপবাস শেষে ইফতার বলে কথা। কান্দি পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের ফল ব্যবসায়ী পিন্টু সাহা বলেন, ‘‘যে খদ্দের গত বার একদিনে পাঁচ-সাত রকমের ফল কিনেছেন, তিনিই এ বার তিন-চার রকমের বেশি কিনছেন না।’’ রসিক এক ফল বিক্রেতার আবার টিপ্পনী, ‘‘অনেক খদ্দেরই মাস্টার মানুষ তো। অনেক ডিএ পাওনা আছে তাঁদের। তাই এ বার কম ফল কিনছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকুরিজীবী হলে বড় থলে আনছেন।’’

তবুও অনুপম কলার দিকে চোখ যাচ্ছে না তাঁদেরও। যাবে কি করে? ৬০ টাকা ডজন যে। ফলে ৩০-৪০ টাকা ডজনের সিঙ্গাপুরি কলা-ই সই। হিমসাগর আম ৭০-১০০ টাকা কেজি। সামান্য ফজলি ৪০-৫০ দর তুলে অসামান্যের দাবিদার।তা না হলে ৫০-৬০ টাকা দরের আম্রপালিতেই ইফতারের রেকাবি সাজছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iftar Fruits
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE