Advertisement
E-Paper

কারও গয়না বন্ধক, কারও বন্ধ ঝাঁপ

ওঁরা ব্যাঙ্ক বা সমবায় সমিতির ঋণ নিয়ে কেউ পশুপালন করেন, কেউ মুড়ি ভাজেন, কেউ তাঁত চালান। তাঁতের কাজ চালিয়ে যেতে গয়না বন্ধক দিয়েছেন রহমতপুরের লিপিকা প্রামাণিক। এবিসিডি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদক তিনি।

অনল আবেদিন ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮

ওঁরা ব্যাঙ্ক বা সমবায় সমিতির ঋণ নিয়ে কেউ পশুপালন করেন, কেউ মুড়ি ভাজেন, কেউ তাঁত চালান।

তাঁতের কাজ চালিয়ে যেতে গয়না বন্ধক দিয়েছেন রহমতপুরের লিপিকা প্রামাণিক। এবিসিডি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদক তিনি।

হরিহরপাড়ায় মন্দিরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য বালিকা দাস মুদির দোকান চালান। সেই আয়েই দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালান বহড়ান দাসপাড়ার বিধবা বালিকা। কয়েক দিন ধরে তাঁর দোকান বন্ধ।

সত্যি বলতে, টাকার অভাবে দুই জেলাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজকর্ম। এঁদের কেউ বাজার থেকে লঙ্কা, হলুদ, ধনে, জিরে কিনে গুঁড়ো করে প্যাকেটবন্দি করে ফের বিক্রি করেন। কেউ চাষির কাছ থেকে ধান কিনে চাল তৈরি করেন। কেউ সেলাই-ফোঁড়াই করেন। সব বন্ধ।

মুর্শিদাবাদে স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে প্রায় ৫০ হাজার। সদস্যের সংখ্যা লাখ ছয়েক। আপাতত বেশির ভাগই বসে গিয়েছেন। নদিয়ায় ২৪ হাজার গোষ্ঠী রয়েছে যারা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেয়। সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণ নেয় প্রায় ২৭ হাজার গোষ্ঠী। সকলের হাত ফাঁকা।

গত ৮-৯ নভেম্বর নদিয়ায় বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শিবির করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম দিন ৭৭০টি গোষ্ঠীকে প্রায় ১০ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ওই রাতেই নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিলের ঘোষণা করেন। এবং পরের দিনের শিবির বানচাল হয়ে যায়। সে দিন ১৪৩২টি গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

করিমপুর ২ ব্লকের রহমতপুরের এবিসিডি স্বনির্ভর গোষ্ঠী মাস দেড়েক আগেই ঋণের জন্য স্থানীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আবেদন করেছিল। কিন্তু টাকা বাতিলের জেরে ঋণ আর মেলেনি। লিপিকা বলেন, “আমরা আগে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ১৫ জন ভাগ করে তাঁতের কাজে লাগিয়েছিলাম। সেই টাকা শোধও করে দিয়েছি। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে ঋণ পাচ্ছি না।”

করিমপুর ১ ব্লকের পোড়াঘাটির রজনী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য রোশনা বিবি জানান, বালিয়া শিশা সমবায় সমিতি থেকে তাঁরা ঋণ নেন। তারা আর ঋণ দিচ্ছে না। ফলে গোষ্ঠীর সদস্যেরা সব্জি চাষ থেকে শুরু করে পশুপালনে অসুবিধায় পড়েছেন। করিমপুর ২ পঞ্চায়েতের ক্লাস্টারের সম্পাদিকা অনুভা চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের এলাকায় ২৩০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঋণের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।”

হরিহরপাড়ার খিদিরপুর পঞ্চায়েত এলাকার ১৯৬টি গোষ্ঠী নিয়ে গড়া খিদিরপুর মহিলা চেতনা সঙ্ঘ তথা রোকিনা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদক বারুইপাড়া গ্রামের রৌশনারা বেগম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে পারছি, তুলতে পারছি না। ১০-১৫ জনের গোষ্ঠীকে কুমড়াদহ ইউবিআই দিতে চাইছে ২০০০ টাকা। ৫০০ টাকা দিতে চাইছে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের খিদিরপুর শাখা। তা নিয়ে তো এক জনের ভাগে বড় জোর ২০০ টাকা মিলবে। কী করব?’’

হরিহরপাড়ার চোঁয়া রোকেয়া সঙ্ঘের অধীনে আছে ২০০ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। সঙ্ঘের সম্পাদক সুলেখা খাতুন বলেন, ‘‘সদস্যেরা কেউ ছাগল পোষেন, কেউ সব্জি চাষ করেন, কেউ দর্জির কাজ করেন। ব্যাঙ্ক থেকে সপ্তাহ তিনেক ধরে টাকা না পাওয়ায় গোষ্ঠীগুলোর কোমর ভেঙে গিয়েছে।’’ বহড়ান দাসপাড়ার মুদির দোকানি বালিকা বলেন, ‘‘৫০-১০০ টাকার মাল নিতে এসে লোকে ২০০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়েছে। খুচরো দিতে না পারায় তাঁকে ধার দিতে হয়েছে। ধারে দিতে-দিতেই সব মাল শেষ। হাতে টাকা নেই। মাল কিনতে পারছি না। তাই ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছি। এখন নিজেরা কী খাব, সেটাই ভাবছি।’’

Demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy