Advertisement
E-Paper

মাত্রা ছাড়া বৃষ্টিতে ক্ষতি ধান, সব্জির

শেষ বৈশাখের এমন ‘খ্যাপা শ্রাবণের মেজাজ’ বড় একটা দেখা যায় না। এক সন্ধ্যায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত! এমনটা শেষ কবে হয়েছে, কেউই মনে করতে পারছেন না। শনিবার সন্ধ্যায় নদিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮২ মিলিমিটার। শুধু রবিবার নয়, শনিবার হয়েছিল ১০ মিলিমিটার। ১১ মে হয়েছিল ১৭ মিলিমিটার। দিনভর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস। বাতাসে আদ্রতার বাড়বাড়ন্তে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০১:৫৯
জলের তলায় চলে গিয়েছে কেটে রাখা বোরো ধান। নদিয়ার সোনাডাঙায় সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

জলের তলায় চলে গিয়েছে কেটে রাখা বোরো ধান। নদিয়ার সোনাডাঙায় সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

শেষ বৈশাখের এমন ‘খ্যাপা শ্রাবণের মেজাজ’ বড় একটা দেখা যায় না। এক সন্ধ্যায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত!

এমনটা শেষ কবে হয়েছে, কেউই মনে করতে পারছেন না। শনিবার সন্ধ্যায় নদিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮২ মিলিমিটার। শুধু রবিবার নয়, শনিবার হয়েছিল ১০ মিলিমিটার। ১১ মে হয়েছিল ১৭ মিলিমিটার। দিনভর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস। বাতাসে আদ্রতার বাড়বাড়ন্তে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। কুলকুল ঘাম। বিকেলের পর থেকেই আকাশজুড়ে ঘোলাটে মেঘ। সন্ধ্যার পরে বা রাতে ঝড়বৃষ্টি বজ্রপাত, কখনও শিলাবৃষ্টি। বৈশাখের এমন অস্বাভাবিক আচরণ এ বার গোটা মাস জুড়ে চলছে।

এমন খামখেয়ালি মেজাজের নিট ফল জেলায় জেলায় চাষে বিপুল ক্ষতি। ধান, পাট, তিল থেকে মরসুমি শাকসব্জি, আম, লিচু কিছুই বাদ পড়েনি প্রকৃতির কোপ থেকে। কখনও ঝড়, কখনও শিলা বৃষ্টি। আবার কখনও জীবাণুঘটিত সংক্রমণে বিপর্যস্ত ফসল। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় শনি এবং রবিবারের বৃষ্টিতে মাথায় হাত চাষিদের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানের। ধান কাটার এই সময়ে নদিয়ায় কমবেশি পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে এখনও ধান কাটা হয়নি। কাটার ঠিক আগে প্রবল বৃষ্টিতে মাঠেই ভেসে গিয়েছে পাকা ধান। কোথাও আবার কেটে রাখা ধান ঘরে তোলার আগে প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে একসা।

নদিয়ার ইদ্রাকপুরের কৃষক পরেশ ঘোষ জানালেন, এলাকায় ৮০ শতাংশ ধান মাঠে। কেউ কেউ সবে কেটেছে। তাঁর নিজের জমির কাটা ধান পাশের জমির ধানের সঙ্গে জলের তোড়ে ভেসে মিশে গিয়েছে। এ সব ধান কোনও কাজেই আসবে না। একই কথা বড় আন্দুলিয়ার পরিমল দেবনাথের। তিনি বলেন, ‘‘ধান পচে যাবে। তিলের বীজ নীচে পড়ছে, পটল বা ঝিঙের মতো গরমকালের সব্জি জমির জমা জলে শেষ। আমরা কোথায় যাব?’’

নদিয়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বৃষ্টির আগে শুধু ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির কারণেই কমবেশি ১৯ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ১৩ কোটি ৮১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা জন্য বরাদ্দ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে করিমপুর ১ ও ২ নম্বর, তেহট্ট ২, কৃষ্ণগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, চাকদহ এবং রানাঘাট ব্লক। এই হিসেব চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর সঙ্গে যোগ হবে অকাল বর্ষণের ক্ষয়ক্ষতি।

প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক নিশীথকুমার দে-এর মত, অকাল বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষতি হবে। কেননা এটাই ধান কাটার সময়। পাটের উপকার হবে। তবে পাটচাষিরা জানাচ্ছেন, প্রবল বৃষ্টিতে পাটগাছের মাথা কেটে গিয়েছে। গাছের বাড় ব্যহত হবে। অন্য দিকে ঝিঙে, শশার মতো সব্জির মাচা ভেঙে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে পটল, ঢেঁড়স-সহ সব ধরনের সব্জির। নিশীথবাবু বলেন, ‘‘এখন দরকার টানা রোদ। তাতে মাটি শুকোবে। কিন্তু, তার আগে জমির জমা জল বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর জমিতে মেটালাক্সিন ৮ শতাংশ এবং ম্যাঙ্কোজেব ৬৪ শতাংশ প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম মিশিয়ে দিতে হবে। অথবা কপারঅক্সি ক্লোরাইড বা কারবেন্ডিজিম ব্যবহার করা যেতে পারে।’’

জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘অকাল বৃষ্টিতে পাকা ধানের ক্ষতি হবে। সব্জি খেতে জল জমার ফলেও সমস্যা হবে।’’ পার্শ্ববর্তী পূর্বস্থলীর কৃষক রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘‘ধানের সঙ্গে খড়ও পচে যাবে এই বৃষ্টিতে। পাটের জমিতে আগাছা বাড়বে। সব্জি নষ্ট হলে নতুন করে সব্জি তৈরি হয়ে বাজারে আসতে যে সময় লাগবে, সেই সময়ে সব্জির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।’’

অভিজ্ঞ চাষির আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ নবদ্বীপ বা সংশ্লিষ্ট বাজারে রবিবার সকাল থেকেই মিলেছে। পটল পঁচিশ টাকায় বিকিয়েছে। বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষও জানালেন, বিভিন্ন এলাকা বিস্তারিত খবর না আসা পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না কত ক্ষতি হয়েছে।

rain storm nadia paddy farmer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy