আমের রাজত্বে মাছের আকাল। বাজার আলো করে থরে-থরে সাজানো আম। অথচ, পাশের মাছ বাজারের হাল বড়ই করুণ। অভিযোগ, পকেটের দামে পছন্দসই মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম শুনে ভিরমি খাওয়ার উপক্রম। প্রতিদিনের কাটাপোনা থেকে বাটা হেন মাছের কিলো পিছু ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত দাম চড়েছে। স্থানীয় খাল-বিল, পুকুরের টাটকা ছোট মাছের আমদানি কম। বরং ভিন্ রাজ্যের চালানি মাছে ভরেছে বাজার।
এমনিতে এই সময়ে বাজারে ‘আম মন্দা’ চলা। লোকে আম ছাড়া কিছু কিনতে চায় না। কিন্তু ভাতের পাতে এক টুকরো মাছ ছাড়াও যে চলে না বাঙালির। সেই মাছেই ঘটেছে বিপত্তি। মৎস্যজীবী থেকে ছোট-বড় মাছ ব্যবসায়ী বা মাছ বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, বাজারে মাছের জোগান নেই বললেই চলে। ভাল মাছ টাকা দিয়েও মিলছে না। আর তাতেই চড়েছে দাম।
কিন্ত কেন মাছের জোগান এত কম?
জবাবে জানা যাচ্ছে, পর পর দু’টি উৎসবে হিন্দু এবং মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা ব্যস্ত ছিলেন। প্রথমে দশহরা এবং তার পরেই ইদ। তাই বেশ কয়েক দিন যাবৎ স্থায়ীয় পর্যায়ে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে গোটা রাজ্যেই। উৎসব মিটলেও আবহওয়া-জনিত কারণে সে ভাবে মাছ ধরা শুরু হয়নি। পাশাপাশি, জামাইষষ্ঠীর বাজারে বিরাট পরিমাণ মাছ কেনাবেচা হয়েছে। এখন ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। মৎস্যজীবী বিশ্বনাথ রাজবংশী বলেন, “গঙ্গাপুজোর আগে-পরে কমবেশি পাঁচ-সাত দিন আমরা মাছ ধরি না। তেমনই বিক্রেতারাও মাছ বিক্রি করেন না। অনেকে এই সময়ে মাছ ছোঁন না।” ফলে, বাজারে মাছের একটা বড় ঘাটতি তৈরি হয়।
তাই এখন মাছের বাজারে ভরসা ভিন্ রাজ্যের চালানি বা স্টোরের মাছ। বিলাসপুর, অন্ধ্রের মাছ বহু জন খেতে পছন্দ করেন না। অন্য দিকে, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরা বন্ধ রাজ্যে। ফলে, সেখানেও ভরসা হিমঘরের মাছ। নবদ্বীপের মৎস্য ব্যবসায়ী বাদল হালদার বলেন, “এখন ইলিশ বাজারে নেই বললেই চলে। স্টোরের প্যাকেট করা কিছু ইলিশ ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অল্প লোকেই কিনছে।”
মাছের বাজার স্বাভাবিক হতে আরও অন্তত সপ্তাহখানেক। হাওড়ার পাইকার অশোক বিশ্বাস বলেন, “১৪ জুন ইলিশ ধরা শুরু হবে। বাজারে জুলাইয়ের গোড়ার দিকে পাওয়া যেতে পারে।” স্থানীয় জেলেরা জানাচ্ছেন, রথযাত্রার আগে মাছ বাজার আগের অবস্থায় ফিরবে না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)