Advertisement
E-Paper

গঙ্গা ভরাচ্ছে পদ্মার ইলিশ

ডিম পাড়ার মরসুমে মা এবং ছোট ইলিশদের বাঁচাতে তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। আর, তাতেই কপাল খুলে গিয়েছে ফরাক্কার জেলে থেকে গেরস্থের। গত পাঁচ দিন ধরে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ উঠছে গঙ্গায়। এক কিলোর মাছ যেমন আছে, আছে ছোট ইলিশ যা ধরা নিষেধ এ দেশেও।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৭
নৌকো ভরেছে ইলিশে। সোমবার ফরাক্কায় অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নৌকো ভরেছে ইলিশে। সোমবার ফরাক্কায় অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ডিম পাড়ার মরসুমে মা এবং ছোট ইলিশদের বাঁচাতে তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। আর, তাতেই কপাল খুলে গিয়েছে ফরাক্কার জেলে থেকে গেরস্থের।

গত পাঁচ দিন ধরে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ উঠছে গঙ্গায়। এক কিলোর মাছ যেমন আছে, আছে ছোট ইলিশ যা ধরা নিষেধ এ দেশেও। এলাকার বাজারে মাঝারি ইলিশের দাম এক ধাক্কায় ৬০০ টাকা থেকে কমে ১৫০-২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২৫০-৩০০ গ্রামের ছোট ইলিশ বিকোচ্ছে জলের দরে— ১০০ টাকা কিলো।

বাংলাদেশে ঢোকার ঠিক আগে নিমতিতার কাছে পদ্মা মিশে রয়েছে গঙ্গায়। আর, সেই পথেই পদ্মা থেকে ইলিশের ঝাঁক পৌঁছচ্ছে ফরাক্কায়। বাঁধ হওয়া ইস্তক যে ফরাক্কায় আর ইলিশের দেখাই মেলে না, সেখানেই গত পাঁচ দিন ধরে জালে উঠছে ইলিশ। খবর ছড়ানো মাত্র এলাকার ছ’সাতশো মৎস্যজীবী তড়িঘড়ি গঙ্গায় নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে ভোরে আর সন্ধেয়, যখন রোদের তেজ থাকে না, নদী জুড়ে জাল হাতে টহল চলছে। নিমতিতা, হাজারপুর, অর্জুনপুর বা ধুলিয়ান লাগোয়া সমস্ত ঘাটে ভোর থেকেই ভিড়। মহাজনেরাও সস্তায় মাছ কিনতে এসে জড়ো হচ্ছেন। কিন্তু ছোট ইলিশ ধরা যে নিষিদ্ধ, তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। মৎস্য দফতর নির্বিকার।

বাংলাদেশে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মায় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই এই সময়টায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। এই সময়টায় সমুদ্র থেকে নদীর মিষ্টি জলে ডিম পাড়তে আসে ইলিশ। তাই বাংলাদেশে ২৭টি জেলায় ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ। তা অমান্য করলে মৎস্যজীবীর মাছ ধরার সমস্ত সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা, এমনকী দু’বছর জেলের সাজাও হতে পারে। উল্টো দিকে, এই সময়টায় যাতে জেলেরা বিপাকে না পড়েন, তার জন্য ২০ কিলো করে চাল দেয় সরকার। এই পদ্ধতিতে গত কয়েক বছরে সে দেশে ইলিশের উৎপাদন যথেষ্ট বেড়েছে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু পথভোলা ইলিশ ফরাক্কার গঙ্গায় চলে এসে জেলেদের খপ্পরে পড়ছে। হাজারপুরে নদীর পাড়ে প্রায় মেলা বসছে সকাল-সন্ধে। মৎস্যজীবী বুধন হালদারের দাবি, “গত পাঁচ দিনে ১৪০ কিলো ইলিশ ধরা পড়েছে আমার জালে। বেশির ভাগেরই সাইজ ৫০০-৬০০ গ্রাম। ২৫০-৩০০ সাইজেরও আছে। ১ কিলোর ইলিশ তুলনায় কম।”

অর্জুনপুরে ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ বিকোচ্ছে ২০০ টাকা কিলোয়। ৮০০ থেকে এক কিলোর ইলিশের দর ৩০০ টাকার মধ্যে। ধুলিয়ানেও কমবেশি একই দাম। কিন্তু নিমতিতায় দামটা ৫০টাকা মতো বেশি। কেন?

ইন্দ্রনগর কলোনির মৎস্যজীবী বিপ্লব বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “সন্ধের পরে ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু রাতে নিমতিতার আশপাশে গঙ্গার পাড়ে যাওয়াই নিষিদ্ধ করেছে বিএসএফ। ফরাক্কার গ্রামগুলি থেকে সীমান্ত বেশ দূরে। সেখানে রাতের নদীতে যেতে বিধিনিষেধ নেই। তাই রাতে গঙ্গায় মাছ ধরতে পারছে তারা। ফলে বেশি মাছও পাচ্ছে। ’’ মৎস্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সাধারণত বছর দুয়েকের ইলিশ ওজনে দাঁড়ায় প্রায় এক কিলোয়। প্রাপ্তবয়স্ক একটি ইলিশ ২০ লক্ষ মতো ডিম পাড়ে। তার ১০ শতাংশ বাঁচলেই এক বছরে লক্ষাধিক ইলিশ মিলতে পারে। সেই কারণেই ডিম ছাড়ার সময়ে বাংলাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ দেশেও ছোট ইলিশ ধরা নিষেধ। কিন্তু সে সব মানছে কে? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ মৎস্যজীবী ফাঁস জাল ও টিনের ডোঙা নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টা পরে জাল গোটাতে-গোটাতে ফেরা। ফাঁস জাল ব্যবহার করাই বেআইনি। কিন্তু কারও কোনও নজরদারি নেই।

মুর্শিদাবাদ জেলা মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা জয়ন্তকুমার প্রধান সোমবার বলেন, “প্রচুর ইলিশ উঠছে বলে আমরাও খবর পেয়েছি। নিয়ম ভেঙে ফাঁস জাল দিয়ে ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে কি না, মঙ্গলবার থেকেই সে বিষয়ে নজরদারি চালানো হবে।”

Huge Supply Hilsa Fish Getting Cheaper Farakka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy