প্রতীকী ছবি।
শৈবাল রায়, বহরমপুর
ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার এক নার্সিংহোমে বাবাকে ভর্তি করিয়েছিলেন পাঁচথুপি কলেজের শিক্ষক শৈবাল। তাঁর কথায়: ‘‘‘আমার বাবার কোমরের অস্ত্রোপচারের পরে রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। কিন্তু ডাক্তার তিন দিনের ছুটিতে বাইরে চলে যান। তাঁর বদলে আর কোনও ডাক্তারকে ডাকা হয়নি। যে সিঙ্গল কেবিনে তাঁকে রাখা হয়েছিল, তার ভাড়া দিনে হাজার তিনেক। কিন্তু বাথরুমের দুর্গন্ধে টেঁকা দায়। নার্স হিসেবে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা পটু নয়। প্রশিক্ষিত বলে মনেই হয় না। শেষে যে বিল দেওয়া হয়েছে, তাতে ওষুধের দাম এমআরপি-র চেয়ে বেশি। আয়াদের ডিউটিও বেশি করে দেখানো হয়েছে।’’
বিপিন সাধুখাঁ, রামনগর
পার্শ্বশিক্ষক বিপিনচন্দ্র শুক্রবার তাঁর বাবাকে রানাঘাটের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করিয়েছিলেম। কিডনির সমস্যা। তাঁর আক্ষেপ: ‘‘ওরা প্রথমে বলল, ৩০-৩৫ হাজার টাকার মধ্যে চিকিৎসা হয়ে যাবে। রবিবারই জানানো হয়, বিল হবে ৪২ হাজার টাকার মতো। সোমবার দুপুরে সেই বিল দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজারে। কী করে কী হল, বুঝতে পারছি না। শুধু সিরিঞ্জ আর দস্তানার জন্যই নাকি রোজ এক হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে!’’
দিলরুবা বিবি, ডোমকল
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন দিলরুবা। তাঁর অভিযোগ, মিনিটের মধ্যে তাঁকে দেখে ডাক্তারবাবু ‘কেস জটিল’ বলে বহরমপুরে পাঠিয়ে দেন। দিনমজুর পরিবার। গাড়ি ভাড়াটুকুও জোগাড় করা কঠিন। ডাক্তারই সস্তায় গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। সেই গাড়ির চালকই তাঁদের ভয় দেখিয়ে তোলে ডোমকলের এক নার্সিংহোমো। আর মিনিট কুড়ির মধ্যে সেখানেই হাজির হন হাসপাতালের সেই চিকিৎসক। সবার সামনে ঢোকেন ‘ওটি’ লেখা ঘরটিতে। আঁতাঁত পরিষ্কার হয়ে যায়।
লাল্টু সাহা, শক্তিপুর
বছর একত্রিশের রাজমিস্ত্রি লাল্টুর বাড়ি মাণিক্যহারে। দুই সন্তানের বাবা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ট্রেন থেকে পড়ে হাঁটু থেকে দুই পা ও কনুই থেকে ডান হাত কাটা পড়ে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল থেকে ‘রেফার’ করা হয় এনআরএসে। পলাশির কাছে পৌঁছে অ্যাম্বুল্যান্স চালক জানান, ‘সরকারি হাসপাতালের থেকে ভাল চিকিৎসা হয় কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার একটি নার্সিংহোমে। চিকিৎসা খরচ ৬০-৬৮ হাজার টাকা।’’ জমি আর সোনা বেচে আড়াই লাখ টাকা মিটিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফিরেছেন লাল্টু। হাত-পা রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
সুমন এহেসান, ইসলামপুর
যে দুপুরে ইসলামপুর মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালের করণিক সুমনের স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠেছিল, তাঁদের চেনা ডাক্তার তখন বহরমপুরের বাইরে। ইসলামপুর থেকে গাড়িতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে আনা হলে এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ‘অবস্থা ভাল নয়’ জানিয়ে বহরমপুর শিল্পতালুকের ভেতরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে বলেন। সুমনের অভিযোগ, ‘‘স্ত্রী যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কিন্তু ওই ডাক্তারের দেখা নেই। তাঁকে ডাকতে অনুরোধ করলে উল্টে বলা হয়, ‘চুপ করে গিয়ে বসুন। ঠিক সময়ে উনি চলে আসবেন।’ কোনও ভাবে নম্বর জোগাড় করে ডাক্তারকে ফোন করলে তিনি বিরক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘এই তো দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। আবার কেন ফোন করেছেন? এখন যেতে পারব না।’ মেডিক্যালেই স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনেন সুমন। কিন্তু গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানো যায়নি।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy