Advertisement
E-Paper

এখন বিরক্ত করবেন না

গত এপ্রিলে বহরমপুরে গীতারাম হাসপাতালে অপটোমেট্রিস্ট হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্যারামেডিক্যাল শাখার ছাত্রী রিয়া। তাঁর যমজ বোন পিয়াও অপটোমেট্রিস্ট, কাজ করেন শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে। ছোট একটি ভাইও রয়েছে তাঁদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৩
থানায় জুলেখার মা ও ভাই।

থানায় জুলেখার মা ও ভাই।

মেয়ের গাড়ি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মালদহের পাকুয়া থেকে বহরমপুরের নার্সিংহোমে চলে এসেছিলেন শ্যামলী সাহা। তখন রাত ৮টা।

নার্সিংহোমে ঢুকেই কাঁদো-কাঁদো গলায় তিনি বলেন, ‘‘রিয়া কোথায়? আমি তাকে দেখতে চাই!’ তাঁকে বলা হয়নি তখনও, রিয়া আর নেই। কিন্তু মায়ের মন হয়তো বুঝে নিয়েছিল।

গত এপ্রিলে বহরমপুরে গীতারাম হাসপাতালে অপটোমেট্রিস্ট হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্যারামেডিক্যাল শাখার ছাত্রী রিয়া। তাঁর যমজ বোন পিয়াও অপটোমেট্রিস্ট, কাজ করেন শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে। ছোট একটি ভাইও রয়েছে তাঁদের। মেয়ের মৃত্যুর কথা ঠারেঠোরে জানানো হয় মাকে। শুনেই তিনি চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘আমি এখন বাঁচব কী করে!’’

অ্যাম্বুল্যান্সটি চালাচ্ছিলেন উৎপল সর্দার। মাস ছয়েক আগে তিনি ওই কাজে ঢুকেছিলেন। বাড়ি বহরমপুর লাগোয়া রাঙামাটি চাঁদপাড়া পঞ্চায়েত এলাকায়। এক ভাই পাইপলাইনের কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায়। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা-মাকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন উৎপলই। সকালে স্নান-খাওয়া সেরে বেরিয়েছিলেন চক্ষু শিবিরে যাবেন বলে। আর ফেরা হল না। বাবা লব সর্দার জঙ্গিপুরে গিয়ে শনাক্ত করলেন ছেলের মৃতদেহ।

নওদার জুলেখা খাতুনের স্বপ্ন ছিল নার্স হবেন। তার জন্যই ত্রিমোহি‌নী মাঠপাড়ার বাড়ি ছেড়ে বহরমপুরে থেকে হাসপাতালে কাজ শিখছিলেন আমতলা কলেজ থেকে বিএ পাশ করা মেয়েটি। দুই বোন এক ভাই। বাবা নুহনবি রিকশা, কখনও বা ভ্যান চালান। খুব কষ্ট করে মেয়েকে মানুষ করছিলেন। ভেবেছিলেন, সং‌সারের হাল ধরবে সে। সব শেষ। স্ত্রী নুরেখা বিবি, ছেলে মুরসালিম শেখকে নিয়ে সন্ধ্যায় জঙ্গিপুর পুলিশ মর্গে গিয়ে তিনি দেখলেন মেয়ের মরা মুখ। ভুল হল, দেখার মতো কিছু আর অবশিষ্ট ছিল না। পুড়ে আংড়া!

বছর দুয়েক আগে চালক হিসেবে হাসপাতালের কাজে ঢুকলেও ইদানীং অফিসকর্মী হিসেবেই কাজ করছিলেন রাতুল সাহা। অযোধ্যানগরের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী আর তিন সন্তান। কাছেই বাড়ি দাদা নির্মাল্য সাহার। তাঁদের বাবা-মা এখনও জীবিত, নির্মাল্যর কাছেই থাকেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনিই রওনা হন জঙ্গিপুর। ভাই কি সত্যিই আর নেই? অনেক ক্ষণ বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। বরং ফোনে বারবার বলতে থাকেন, ‘‘এখানকার লোকজন আমায় বলেছে, গাড়িতে চালক ছাড়া আর তিন মহিলা ছিলেন। আর কোনও পুরুষ ছিল না। তা হলে, ভাই কী করে গাড়িতে থাকবে?’’

ভুল ভাঙতে অবশ্য দেরি হয়নি। পুলিশ মর্গে গিয়ে তাঁকেও শনাক্ত করতে হয় ভাইয়ের পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া দেহ। তাঁদের বাবার বয়স ছিয়াশি। তাঁকে সন্তানের মৃত্যুসংবাদ দেওয়ার সাহস কারও হয়নি। গোটা পাড়া থমথমে। কোনও রকমে ফোনে ধরা যায় রাতুলের মা-কে। স্থির শান্ত গলায় তিনি শুধু বলেন, ‘‘দয়া করে এখন আমাদের বাড়িতে এসে বিরক্ত করবেন না। রাতুলের বাবাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।’’

Accident Death Ambulance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy