Advertisement
E-Paper

উপছে পড়েছে ত্রাণ শিবির, আশ্রয় স্টেশনে

দুর্গতদের ভিড়ে উপছে পড়ছে ত্রাণ শিবির। সেখানে ছোটো ছোটো নাতি-নাতনি আর অন্ধ ছেলেকে নিয়ে থাকার ঝুঁকি নেননি বহরমপুরের সাটুইয়ের দিনমজুর পরিবারের পাল দম্পতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৯

দুর্গতদের ভিড়ে উপছে পড়ছে ত্রাণ শিবির। সেখানে ছোটো ছোটো নাতি-নাতনি আর অন্ধ ছেলেকে নিয়ে থাকার ঝুঁকি নেননি বহরমপুরের সাটুইয়ের দিনমজুর পরিবারের পাল দম্পতি। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের সাত জন আশ্রয় নিয়েছেন দেড় কিলোমিটার দূরের চৌরিগাছা স্টেশনে।

দিন দশেক আগেই জল ঢুকেছিল মদনমোহন পালের পোড়াডাঙার মাটির বাড়িতে। ক’দিন আগে তা কিছুটা নামতেও শুরু করেছিল। কিন্তু, টানা বৃষ্টি ও বাঁধের ছাড়া জলে শনিবার সকাল থেকে হু হু করে জল বাড়তে শুরু করে। দুপুরের মধ্যেই কোমর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বাড়িতে। বিপদ বুঝে প্রশাসনের লোকজন তাঁদের সাটুই স্কুলের শিবিরে নিয়ে যান। কিন্তু, শিবিরে তখন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। সাকুল্যে যেখানে একশো জন থাকতে পারেন, সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন দেড়শোরও বেশি মানুষ। অবস্থা দেখে শনিবার দুপুর থেকে তুলনায় উঁচু জায়গা স্টেশনে টিনের ছাউনির নীচে থাকতে শুরু করেছেন ওঁরা।

কোনও রকমে মাথা গুঁজে থাকার জায়গা তো হল! কিন্তু, খাবার?

শনিবার রাতে খাবার জোটেনি পরিবারের কারও। রবিববার সকালটাও কেটেছে পেটে কিল মেরে। মদনমোহনবাবুর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘দুপুরে হঠাৎ শুনি রামকৃষ্ণ মিশনের তৈরি খাবার দেওয়া হচ্ছে। এক ছুটে চলে গিয়েছিলাম। চব্বিশ ঘণ্টা পরে সকলে খিচুরি খেয়েছি।’’ আধপেটা খেয়ে রাতের জন্যে কিছুটা খাবার বাঁচিয়ে রেখেছেন লক্ষ্মীদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে যদি খাবার না জোটে!’’

রবিবার স্টেশনে দেখা মিলল পরিবারের। প্ল্যাটফর্মে গুটিশুটি মেরে বৃদ্ধ বাবামায়ের সঙ্গে বসে ছিলেন বড় ছেলে বছর সাঁয়ত্রিশের প্রদীপ পাল। রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে চোখে সিমেন্ট পড়ে দু’টো চোখই হারিয়েছেন প্রদীপবাবু। অচেনা পরিবেশে রাতে ঘুমতে পারেননি তিনি। সে কথা জানিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন, ‘‘ঘুম আসবে কোথা থেকে? খিদেয় পেট টনটন করছে!’’ ‘‘এ দিন মিশনের খিচুড়ি না পেলে কী যে হত!’’— বলছেন প্রদীপ।

হঠাৎ জল বাড়তে শুরু করায় বাড়ি থেকে খাবার কিছুই তেমন বের করতে পারেননি লক্ষ্মীদেবী। ‘‘খাবার তেমন ছিল না। কিন্তু, মুড়ির একটা প্যাকেট ছিল। খাটের তলায় জল ঢুকে সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল’’— বললেন তিনি। পরিবারের আয় বলতে ছোট ছেলে উত্তমের লজঝড়ে ভ্যান। রাস্তা জলের তলায়। এখন ভ্যান চালানোর উপায় নেই। ফলে নেই রোজগারও। মুড়ি ভেজে কিছু রোজগার করতেন লক্ষ্মীদেবী। সেটাও বন্ধ! মদনমোহনবাবুর কথায়, ‘‘জমানো টাকাও নেই যে কিছু দিন সামলে নেব!’’

এ দিন রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ত্রাণ বিলি করা হয়। এলাকায় দেখা মেলেনি স্বাস্থ্য দফতর বা অন্য দফতরের কর্তাদের। সাটুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের তরুণকান্তি দাস জানিয়েছেন, এলাকার ১৮টি গ্রাম সংসদের ১৬টি জলের তলায়। বাকি দুটোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় ভাবে পঞ্চায়েত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? প্রধানের প্রতিশ্রুতি, ‘‘আজ, সোমবার পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় খাবার বিলি করা হবে।’’

Huge gathering relief fund Ramkrishna Mission congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy