E-Paper

প্রকৃতির মুখভার, আটকে প্রতিমার কাজ

মৃৎশিল্পীরা অবশ্য জানতে চাইছেন— কবে রোদ উঠবে? তাঁদের কথায়, এবারে দুর্গা প্রতিমার হাল ভীষণ খারাপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

স্বচ্ছ পলিথিনের চাদরে আপাদমস্তক মোড়া সারি সারি প্রতিমা। কোনটির সবে এক মেটে হয়েছে। এখনও দেবীমুখ বসানো হয়নি। কোনটির আবার শুধুই খড়ের অবয়ব। মেঘলা আকাশের মতো গম্ভীর মুখে তার সামনে ঘোরাফেরা করছেন মৃৎশিল্পীরা। দুর্গাপুজোর সপ্তাহতিনেক আগে এমনই ছবি নদিয়ার বিভিন্ন কুমোরপাড়ায়। বঙ্গোপসাগরে উদ্ভুত গভীর নিম্নচাপের জেরে বিগত ৭২ ঘণ্টায় নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত হয়েছে নদিয়া জুড়ে। আর তাতেই চরম বিপাকে পড়ছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। যখন প্রতিমা তৈরির সব চেয়ে ব্যস্ত সময়, তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তড়িৎ পাল, অনুপ পাল কিংবা বাপি পালের মতো জেলার নামী মৃৎশিল্পীরা। আর নিরুপায় হয়ে দেখছেন— কী ভাবে এক-একটা দিন গলে যাচ্ছে অঝোর বৃষ্টিতে। মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে।

মৃৎশিল্পীরা অবশ্য জানতে চাইছেন— কবে রোদ উঠবে? তাঁদের কথায়, এবারে দুর্গা প্রতিমার হাল ভীষণ খারাপ। কী করে বারোয়ারির বড় প্রতিমাগুলির কাজ শেষ করবেন তাঁরা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। একই সমস্যা বাড়ির পুজোর ছোট-ছোট প্রতিমা নিয়েও। টানা বৃষ্টিতে ঘরে-বাইরে কোথাও কাজ করা যাচ্ছে না। নিম্নচাপের আবহাওয়ায় কিছুই শুকোচ্ছে না। অথচ, শিল্পীদের হাতের সিংহভাগ প্রতিমার কাজ বলতে গেলে কিছুই করা হয়নি।

কৃষ্ণনগরের নামী শিল্পী তড়িৎ পাল বলেন, “মাটির প্রতিমার কাজে সব চেয়ে বড় বিপদ হল বৃষ্টি। পুজোর মুখে এ ভাবে টানা বৃষ্টি সাম্প্রতিক সময়ে দেখিনি। এক-আধ দিন হলে সামলে দেওয়া যায়। টানা পাঁচ-ছ’দিন হয়ে গেল রোদের মুখ দেখা যাচ্ছে না। অথচ, পুজো এগিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে সব মৃৎশিল্পীই খুবই উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।”

মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের সকলেরই প্রায় কাজের জায়গা ছোট। ফলে, পুজোর মরসুমে সকলেই শিল্পাগারের বাইরে রাস্তা বা সংলগ্ন কোনও মাঠে প্রতিমা নির্মাণের কাজ করেন। এই বৃষ্টি-বহুল আবহাওয়ায় সে সব বন্ধ। শিল্পীদের ঘরের মধ্যে যে ক’টি ছোট প্রতিমা আঁটে, সেখানেও কাজ করা যাচ্ছে না। ভিজে আবহাওয়ায় মাটি শুকোচ্ছে না বলে অভিযোগ।

নবদ্বীপের মৃৎশিল্পী বাপি পালের হাতে ছোট-বড় মিলিয়ে এবারে ৩০টি প্রতিমা। তিনি বলেন, “বৃষ্টির দাপটে প্রচুর প্রতিমা প্লাস্টিক মুড়ে রেখেছি। বারোয়ারির প্রতিমা সব বড়। কিন্তু অর্ধেক কাজও হয়নি। কেবল মাত্র যে সব বাড়ির নিজস্ব দুর্গামণ্ডপ আছে, সেখানে কিছু কাজ হয়েছে। যাঁরা বাড়ির ছোট প্রতিমা কারখানা থেকে সরাসরি নিয়ে যান, তাঁদের কাজের অবস্থা আরও খারাপ।” ৩০টি প্রতিমার জন্য হাতে যা সময়, তাতে বাপির কথায়— ‘‘এখন ৭২ ঘণ্টায় দিন হলে ভাল হয়! পাঁচ জন কারিগর বসে আছেন বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়।’’

একই বক্তব্য রানাঘাটের মৃৎশিল্পী অনুপ পালের। তিনি এ বার ৫০টিরও বেশি প্রতিমার বায়না পেয়েছেন। কিন্তু এই অল্প দিনে কী করে কী হবে, ভেবেই কূল পাচ্ছেন না। অনুপ বলেন, “এ বার গরমের সময় থেকেই সমস্যার শুরু। প্রবল গরমে কাজের লোক না মেলায় প্রতিমার মাটি পেতে খুব অসুবিধা হয়েছে। এর পর বৃষ্টি। এ সময়ে এত ঘন ঘন বৃষ্টি কোনও বার হয় না।”

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এই মরসুমে তাঁদের অস্থায়ী কারিগর নিয়োগ করতে হয়। যাঁদের দৈনিক মজুরি ৮০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় তাঁরা কাজ না করতে পারলেও প্রতি দিনের টাকা গুণতে হচ্ছে। বাপি পাল বলেন, “প্রতি বছর প্রতিমার নির্মাণ ব্যয়ের বহর যা বাড়ছে, তার তুলনায় প্রতিমার দাম বাড়াতে পারছি না। লাভ ক্রমশ কমছে। তার উপরে প্রকৃতি যদি এ ভাবে মারে, তো বাঁচাবে কে?”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nadia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy