অনশনে অসুস্থ দুই পড়ুয়া। জেএনএম হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (ট্রিপল আইটি)-র বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী। মঙ্গলবার তিন জনকে জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করানো হয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে ট্রিপল আইটি-র প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ৩৫ জন পড়ুয়া অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে অনশন শুরু করেছেন। সোমবার সকালে অনশনরত পড়ুয়া তন্ময় জৈন অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেএনএম হাসপাতালে স্যালাইন নিয়ে ফিরে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে ফের অনশন শুরু করেছেন। এ দিন আরও কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। প্রথম বর্ষের রাহুল কুমার এবং দ্বিতীয় বর্ষের প্রতীক সাগর ও ঋতু চৌহানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার পরেও পড়ুয়ারা অনশনে অনড়।
ইতিমধ্যে পুলিশ ও প্রশাসন দফায় দফায় আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সোমবার তথ্য প্রযুক্তি দফতরের এক যুগ্ম সচিব কথা বলতে এসেছিলেন। অন্য কোনও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরীক্ষাগার ও গ্রন্থাগার যাতে তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন, তা তাঁরা দেখবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন। কিন্তু পড়ুয়ারা কোনও কিছুতেই দমছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এমন প্রতিশ্রুতি তাঁরা পাঁচ বছর ধরে শুনে আসছেন। এ বার ক্যাম্পাসের বদল করতেই হবে।
দিন দশেক আগে কল্যাণী-ব্যারাকপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে অস্থায়ী ক্যাম্পাস, ওয়েবেলে অবস্থান আন্দোলন শুরু করেন ট্রিপল আইটি-র পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৪ সালে কল্যাণীতে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুধু জমিটুকুই বরাদ্দ হয়েছে। ক্যাম্পাস তৈরি করা হয়নি। প্রথমে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্লাস হত। পরে ক্লাস শুরু হয় ওয়েবেলে। সেখানে তাঁদের জন্য মাত্র তিনটি ক্লাসঘর বরাদ্দ। অথচ চারটি বর্ষের পড়ুয়ারা রয়েছেন।
ছাত্রছাত্রীদের দাবি, এই সেমিস্টার থেকেই তাঁদের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ কোনও প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করার সুযোগ দিতে হবে। এবং সেখানেই তাঁদের হস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবি নিয়েই রবিবার থেকে অনশনে বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের আক্ষেপ, এর আগেও তাঁরা একাধিক বার আন্দোলন করেছেন। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি শুনে তা প্রত্যাহারও করেছেন। এ বার তাঁরা আর আশ্বাস শুনতে রাজি নন।
কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের এক পড়ুয়ার বক্তব্য, দেশে আরও বেশ কয়েকটি ট্রিপল আইটি-র ক্যাম্পাস তৈরি হয়নি। সেখানকার পড়ুয়ারা আশপাশের কোনও এনআইটি-তে ক্লাস করেন। এই রাজ্যেও দুর্গাপুর এনআইটি রয়েছে। সেখানে বা কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে তাঁদের ক্লাসের ব্যবস্থা করা যায়। চতুর্থ বর্ষের আর এক ছাত্রের আক্ষেপ, এখানে পড়তে গেলে সেমিস্টার প্রতি এক লাখ টাকা দিতে হয়। বছরে দু’টি সেমিস্টারের ফি ও হস্টেলের খরচ মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়। তা সত্ত্বেও কোনও পরিকাঠামোই তৈরি করা হয়নি। কিছু বলতে গেলেই বলা হচ্ছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। যা করার কেন্দ্রই করবে।
সমস্যা হল, এই প্রতিষ্ঠানের পৃথক কোনও অধিকর্তা নেই। খড়গপুর আইআইটি-র অধিকর্তা অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী ‘মেন্টর’ অধিকর্তা হিসেবে রয়েছেন। আন্দোলনের খবর পেয়ে কয়েক দিন আগে তিনি এই অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। কিন্তু আশু দাবিপূরণের সুস্পষ্ট আশ্বাস তিনিও দেননি।
রাতে ট্রিপল আইটি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার মধুমিতা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা রেখেছি। পুলিশ একটা অ্যাম্বুল্য়ান্স দিয়েছে। জেএনএম-ও জানিয়েছে, দরকার হলে অ্যাম্বুল্যান্স দেবে। ওঁদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার দিকে সব সময়ে নজর রাখা হচ্ছে। আলোচনার রাস্তাও খোলা রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy