Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সব্জি দিয়ে ভাত খেয়ে বলতেন ‘বিউটিফুল’

জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক কর্মী বলছেন, প্রতিটা পদক্ষেপই স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ঘুম ভাঙেনি। জেলা গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলছেন, ‘‘একটা অদ্ভুত গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখেছি থানার অফিসারদের মধ্যে।’’

সেই কারখানা। নিজস্ব চিত্র।

সেই কারখানা। নিজস্ব চিত্র।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
নওদা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

আমতলা রুটের বাস রাস্তা থেকে মেরেকেটে এক কিলোমিটার রাস্তা। তার পরে কলাবাগানের নিস্তব্ধতার আড়ালে মধুপুরের কারখানা। পিছনে মাঠ, আলপথে চলাচলহীন চরাচর জুড়ে গ্রামের মানুষ তেমন পা মাড়ান না, পুলিশও না।

সিআইডি অন্তত তাই মনে করছে। পুলিশের পা’ই পড়েনি এ পথে। নাকি পড়তে দেওয়াই হয়নি? স্থানীয় থানার কাছে নিজেদের এমন গুটিয়ে রাখল কী করে মাদকের চিনা কারবারিরা? প্রশ্নটা ধাওয়া করছে সিআইডিকে। এক সিআইডি কর্তা বলছেন, ‘‘এত গাড়ির আনাগোনা, চুলের ব্যবসার নামে এত বিদেশির অনর্গল যাতায়াত, পুলিশের মনে এক বার প্রশ্ন জাগল না, স্ট্রেঞ্জ!’’

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ প্রশ্নটা স্থানীয় থানার কাছে স্পষ্টই রেখেছিলেন তাঁরা। সদুত্তর মেলেনি। কারখানার পাশেই বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। সেখানে আগে ৬৩ কেভি পাওয়ার ছিল, কারখানা তৈরির মাস কয়েকের মধ্যেই তা ১০৫ কেভি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের কোনও কর্তারও এক বার প্রশ্ন জাগল না কেন? জেলা পুলিশেরও একাংশ মনে করছে, নওদা থানার পুলিশ চিনাদের কারবার জানত।

জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক কর্মী বলছেন, প্রতিটা পদক্ষেপই স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ঘুম ভাঙেনি। জেলা গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলছেন, ‘‘একটা অদ্ভুত গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখেছি থানার অফিসারদের মধ্যে।’’

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চিনা কারবারিদের কাছে তুষার নামে দিল্লির এক কারবারিরও নিয়মিত আনাগোনার খবর পেয়েছিল তারা। যে শুধু ইংরাজি বা বাংলা নয়, চিনা ভাষাতেও তুখোড় ছিল। সে কথাও নওদার পুলিশের কানে গিয়েছিল, কিন্তু কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে গা করেনি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, নওদায় শুধু চিনা নয়, মায়ানমার এমনকী নেপালের কিছু বাসিন্দারও নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আর এ সব তথ্যের অনেকটাই উঠে এসেছে স্থানীয় জনা তিনেক বাসিন্দাকে জেরা করে। যাঁদের বাড়িতেই চিনা ‘সাহেব’রা নিয়মিত উঠতেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সটান বেলডাঙা এনে তোয়াজের খামতি রাখতেন না তাঁরা। অকপটেই তাঁদের এক জন বলছেন, ‘‘জল আর প্যাকেট-বন্দি মাংস ওঁরা সঙ্গেই আনতেন। খেতেন বেশি সব্জি। আমরা যেমন ভাত দিয়ে সব্জি খাই ওঁরা তেমনি সব্জি দিয়ে সামান্য ভাত খেতেন, বলতেন বিউটিফুল!’’ পাছে মোটা দামের খদ্দের হাতছাড়া হয় তাই পাঁচ কান বিশেষ করতেন না ওঁরা। চিনাদের তোয়াজ করে বাড়িতে রেখে দিন কয়েকের মধ্যেই সটান কলকাতা বিমানবন্দর বা পূর্ব নেদিনীপুরে পাঠিয়ে দিতেন তাঁরা। সিআইডি’র অন্যতম ভরসা এখন এই চিনা-আশ্রয়কারীরাও।

তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘কী ব্যবসা করতে বেলডাঙা আসা, অত কৌতুহল ছিল না আমাদের, দিন তিনেকের ট্যুরে পনেরো-আঠারো হাজার টাকা রোজগার করেছি, অত মাথা ঘামানোর প্রয়োজনই ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beldanga Heroin trafficking Illegal Drug trade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE