ট্রাডিশন-চলছেই। —নিজস্ব চিত্র।
তিন চাকার গাড়িটার পিছনে টানটান লেখা—ট্রাফিক আইন মেনে চলুন!
অথচ গাড়িটারই কোনও আইনি বৈধতা নেই।
আজ্ঞে হ্যাঁ, লছিমনের কথাই বলা হচ্ছে। কোথাও তাকে ডাকা হয় ভ্যানো, কোথাও আবার তার নাম ইঞ্জিন ভ্যান। কিন্তু নামে আর কী যায় আসে!
পুলিশ-প্রশাসন-আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গলি থেকে রাজপথ ছুটে বেড়াচ্ছে বেআইনি সেই ত্রিচক্রযান। দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যেমনটা ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে।
রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছে কাটা পা। রক্তে ভেজা পিচ রাস্তার উপরে ছটফট করছেন বছর সাতচল্লিশের এক যুবক। বাবার এমন অবস্থা দেখে তারস্বরে চিৎকার করছেন কলেজ প়ড়ুয়া মেয়ে। একটু দূরেই পড়ে রয়েছে ওই যুবকের মোটরবাইক।
রায়নগরের বাসিন্দা গোপীনাথ মণ্ডল নামে ওই যুবক ও তার কাটা পা নিয়ে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল ও পরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাঁর পা আর জোড়া লাগানো যায়নি। গোপীনাথের মেয়ে অম্বিকার অভিযোগ, ‘‘সেই কবে থেকেই শুনছি ওই গাড়িগুলো বেআইনি। তাহলে সেগুলো চলছে কী ভাবে? আরও কত লোক পঙ্গু হলে, আরও কত লোকের মৃত্যু হলে তবে প্রশাসনের টনক নড়বে?’’
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ, পড়শি দুই জেলাতেই ব্যাপক ভাবে চলাচল করে লছিমন। কখনও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন প্রশাসন লছিমন ও তার চালকদের ধরপাকড় শুরু করে। কিন্তু সেই ঘটনা থিতিয়ে যেতেই ফের শুরু হয় লছিমন যাত্রা।
আর বেআইনি এই গাড়ির ব্যবহার দেখলে চোখ কপালে ওঠে। কোথাও সে গাড়ি যাত্রী নিয়ে ছুটছে। সামনে লেখা অমুক জায়গা থেকে তমুক জায়গা। ওটা তখন যাত্রীবাহী। কোথাও সাতসকালে ছুটছে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে। তখন তা পুলকার। রোগী নিয়ে হাসপাতালে ছুটলে তখন তা অ্যাম্বুল্যান্স। আর পণ্য নিয়ে গেলে মালগাড়ি।
এদের দাপটে বাস মালিক সংগঠন ধর্মঘট করেও কোনও সুরাহা করতে পারেনি। ইদের আগে শহরে যানজট রুখতে শহরের রাস্তায় ও রাজ্য সড়কে লছিমন চলাচলে নিয়ন্ত্রন আনতে চেয়েছিল ডোমকল পুরসভা। এ নিয়ে প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে মাইকে লাগাতার প্রচারও করা হয়েছে পুরসভার তরফে। কিন্তু সে কথা কানে যায়নি লছিমন চালকদের।
নদিয়ার এক পুলিশ কর্তা জানান, হোগলবেড়িয়ার ঘটনায় লছিমনটাকে আটক করে চালকের খোঁজ চলছে। আর মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন ও পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার দু’জনেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে সে আশ্বাসে অবশ্য বিশেষ ভরসা রাখতে পারছে না সীমান্ত ঘেঁষা দুই জেলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy