প্রতীকী ছবি।
সীমান্তে মানব পাচার কমলেও তা যে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি তা মানল বিএসএফ। গত এক বছরে ৩৩ জন মহিলাকে মানব পাচারের শিকার থেকে উদ্ধার করেছেন বিএসএফ জওয়ানরা। এদের মধ্যে ৫ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ২৯টি ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩ জন দালালকে।
মেয়েদের বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিভিন্ন কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সীমান্তের চোরাপথে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এদের মধ্যে অনেকেই ধরা পড়েছে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন সীমান্তে।
বিএসএফের তদন্তে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গরিব ঘরের মহিলাদের আর্থিক অভাবের সুযোগ নিয়ে বিউটি পার্লার, বার ড্যান্সার, জিম হেল্পার, ম্যাসাজ পার্লার, ওয়েটারের ও বাড়িতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে যৌন কর্মীর পেশায় লাগানো হয়। এর বিনিময়ে দালালেরা বিরাট পরিমাণে আর্থিক ফয়দা পায়।
গত বছর ১৫ জানুয়ারি ভারত –বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারের জন্য মুর্শিদাবাদ সহ দক্ষিণবঙ্গের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে মানব পাচার প্রতিরোধ ইউনিট মোতায়েন করে বিএসএফ। মানব, বিশেষত মহিলাদের পাচারের হাত থেকে রক্ষা করতেই এই ধরনের বিশেষ মানব পাচার প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করা হয়। দালালদের ধরতে ওই সব চিহ্নিতস্থানগুলিতে তাদের মোতায়েন করেই মিলেছে সাফল্য, দাবি বিএসএফের।
বিএসএফের দাবি, আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিয়োজিত মানব পাচার প্রতিরোধ ইউনিট (অ্যান্টি-হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট) গত বছর ২০২১ সালের ১২ মাসে ২৯টি ঘটনায় ৩৩ জন মহিলাকে মানব পাচারের অবৈধ ব্যবসার শিকারের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছে। সেই সঙ্গে ৩৩ জন দালালকে গ্রেপ্তার করেছে তারা,যারা দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরণের নারী পাচারের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
বিএসএফের মতে, সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকায় মানব পাচার প্রতিরোধ ইউনিট মোতায়েন হওয়ার পর মানব পাচারের ঘটনা কমলেও একেবারে নির্মূল করা যায়নি। মানব পাচারের ঘটনার মূলোৎপাটনের জন্য দালালদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠালেই হবে না, দরিদ্র ও নিরপরাধ মেয়েদের মানব পাচারের জঘন্য কাজ সম্পর্কে সচেতন করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যাতে ভবিষ্যতে কোনও মেয়েকেই এই সব মানব পাচারকারীদের শিকার হতে না হয়।
বিএসএফের তরফে জানা যায়, সীমান্ত এলাকার আশপাশে বেশির ভাগ গরিব পরিবার বসবাস করেন। আর্থিক অভাবে পড়ে তাঁরা কাজের খোঁজ করলে এই সব দালালরা তাঁদের বিভিন্ন কাজের লোভ দেখায়। তাঁরা তাতে বিশ্বাস করে সীমান্ত পেরিয়ে আসার চেষ্টা করে দালালদের হাত ধরে। তখনই তাঁরা বিএসএফ জওয়ানদের হাতে ধরা পড়েন সীমান্তে। বিউটি পার্লার, বার ড্যান্সার, জিম হেল্পার, ম্যাসাজ পার্লারে কাজ পেতেই দেশ ছাড়ার চেষ্টা করে তারা। পরে দেখা যায় সব আশ্বাসই মিথ্যে। আসলে তাদের পতিতাবৃত্তির কাজে লাগানো হয়। বিনিময়ে মোটা টাকা পায় দালালেরা।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি সুরজিৎ সিং গুলেরিয়া বলেন, “প্রায়ই দেখা যায় মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত দালালেরা ভালো চাকরি ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র ও অসহায় মেয়েদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে নিয়ে আসে এবং এখানে পতিতাবৃত্তির মত জঘন্য কাজে লাগিয়ে দেয়। বিএসএফ সীমান্তে মানব পাচার বন্ধে তাই কঠোর পদক্ষেপ করছে। ইন্সপেক্টর জেনারেলের নেতৃত্বে সীমান্তে বিশেষ বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টার ফলেই নারী পাচার কাণ্ডে ৩৩ জন দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy