অভিযোগ, জেলায় হেরোইনের পাশাপাশি চাহিদা বাড়ছে তা তৈরির উপকরণেরও। পোস্তের আঠার পাশাপাশি এর অন্যতম প্রধান উপকরণ অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড ও সোডিয়াম বাই কার্বনেট। তার চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন জেলা পুলিশের-প্রশাসনের কর্তারা। এই দুই সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির মানে, এলাকায় হেরোইনের উৎপাদনও বাড়ছে, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকশো কিলোগ্রাম করে এই দুই উপকরণ উদ্ধার হওয়ায় সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হেরোইনের পাশাপাশি এই সমস্ত হেরোইন তৈরির উপকরণও জেলায় আসছে উত্তরপ্রদেশ থেকে।
দিন কয়েক আগে হেরোইনের পাশাপাশি অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড পাচারের অভিযোগে নয় জনকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় কৃষ্ণনগর আদালত। ২০২২ সালে ৪৯.১ কেজি হেরোইন ও ৩৮৭ লিটার অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড পাচার করার সময়ে নাকাশিপাড়া থেকে পাচারকারীদের হাতেনাতে ধরে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের জোরাকুঠি এলাকায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর থেকে প্রায় ৪৭০ লিটার অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড আটক করেছে পুলিশ। এই বিশাল পরিমাণ অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড গাড়িতে করে সোজা উত্তরপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা সকলেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা, তারাই অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড নিয়ে এসেছিল। তবে সেগুলি কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা পুলিশের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়।
একই ভাবে দিন কয়েক আগে পলাশিপাড়ার বড় নলদা এলাকায় হানা দিয়ে পুলিশ বেশ কিছু হেরোইনের পাশাপাশি প্রায় ৮০ লিটার অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু সোডিয়াম বাই কার্বনেট উদ্ধার হয়। সম্প্রতি কালীগঞ্জ থানা এলাকা থেকেও প্রায় তিনশো লিটারের মতো অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড উদ্ধার করেছিল এসটিএফ। এ বার কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হল।
পুলিশের দাবি, এই বিশাল পরিমাণ অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড পলাশিপাড়ার বড় নলদার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের লালগোলা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় হেরোইন তৈরির জন্য। অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইডকে হেরোইন তৈরি ও পাচারের কাজের সঙ্গে যুক্তেরা ‘পানি’ নামে জানে। আর সোডিয়াম বাই কার্বনেটকে বলা হয় ‘লবণ’ বলে জানা গিয়েছে।
এই পানি আর লবণের চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সেটা আর স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সুদুর উত্তরপ্রদেশ থেকে গোপনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। খোলা বাজার থেকে কোনও মতেই বৈধ ভাবে এত পরিমাণ অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড ও সোডিয়াম বাই কার্বনেট কেনা সম্ভব নয়। এক জনকে এতটা পরিমাণ রাসায়নিক দেওয়া হবে না। ফলে, সেটি কিনতে গেলে জানাজানি হতে পারে। সেই কারণেই হেরোইন তৈরির সামগ্রী বাইরে থেকে আনানো চলছে বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)