Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Krishnanagar

পোস্টার পড়ল দত্তদের নিয়ে, জল্পনা অসীম

শুক্রবার দেখা গেল কিছু পোস্টার যেগুলিতে প্রাক্তন পুরপ্রধান এবং ‘দত্ত পরিবার’-এর লোকেদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩৮
Share: Save:

যা এত দিন যা ছিল দলের অন্দরে ফিসফাস, সেটাই এ বার পোস্টার হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ কি সত্যিই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন?

দিন কয়েক আগে নদিয়ার জেলাসদরে এসে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার এমনটই দাবি করেছিলেন। শুক্রবার দেখা গেল কিছু পোস্টার যেগুলিতে প্রাক্তন পুরপ্রধান এবং ‘দত্ত পরিবার’-এর লোকেদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিলে ‘ভোট দেব তৃণমূলে’ বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার কৃষ্ণনগর শহরের পোস্ট অফিস মোড়-সহ একাধিক জায়গার দেওয়ালে, এমনকি বিজেপি কার্যালয়ের দেওয়ালেও এই ধরনের পোস্টার দেখতে পাওয়া যায়। কোনওটাতে বলা হয়েছে— ‘আসানসোল পারলে কৃষ্ণনগর পারবে। দত্ত পরিবার ও চেয়ারম্যান বিজপি হলে ভোট দেব তৃণমূলে।’। কোনওটায় লেখা— ‘আমরা ছিলাম বুক চিতিয়ে তোমরা ছিলে না, আসবে সাথে এস তবে মাথায় তুলব না’। বা— ‘যদি জামা পাল্টে তৃণমূল নেতা বিজেপি হয় তা হলে লড়াই করে হবে কী?’ এমনও লেখা হয়েছে— ‘শহিদ হওয়া বিজেপি কর্মীদের বলিদান ও বেঁচে থাকা কর্মীদের সম্মান দিন। না হলে গেরুয়া ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিন’। প্রতিটি পোস্টারের নীচে লেখা, ‘জনগনের কণ্ঠ’।

বিজেপি নেতাকর্মীদেরও অনেকের আশঙ্কা, তৃণমূলে ‘ক্ষমতা হারানো’ নেতারা তাদের দলে যোগ দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিজেপির পুরনো নেতারা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলতে পারেন। কারও কারও ধারণা, সেই আশঙ্কা থেকেই বিজেপির একটা অংশ এই সব পোস্টার সাঁটার পিছনে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটা তৃণমূলের অন্দরের বিবাদের প্রকাশ, গৌরী দত্ত ও অসীম সাহাদের বিশ্বাযোগ্যতা নষ্ট করে তাঁদের আরও কোণঠাসা করার চাল।

তৃণমূলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই পুরনোদের সঙ্গে নতুন জেলা নেতৃত্বের বিবাদ বারবার প্রকাশ্যে আসছে। জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও গরহাজির থাকতে দেখে গিয়েছে পুরনো নেতাদের। জয়প্রকাশ এসে সরাসরি প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত, রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহাদের নাম করে দাবি করেছিলেন, “এঁরা তো তৃণমূল থেকে বেরনোর দরজায় অপেক্ষা করছেন। কোনও রকম সুযোগ হলেই দৌড় মারবেন তৃণমূল থেকে।” শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে এঁদের কাউকে-কাউকে নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

শহরের অনেকেই মনে করছেন, ‘দত্ত পরিবার’ বলতে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত ও তাঁর ছেলে অয়ন দত্তকে বোঝানো হয়েছে। অয়ন টিএমসিপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি। সেই সময় থেকে তাঁর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সুসম্পর্কের কথা অনেকেরই জানা। তবে গৌরীশঙ্কর দত্তের কটাক্ষ, “জানি না, কোন দত্তদের কথা বলা হয়েছে। নিশ্চয়ই বিবেকানন্দের (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) পরিবারকে নিয়ে বলা হয়নি!” তিনি বলেন, “যাতায়াতের খেলাটা যারা জোয়ারে আসে ভাটায় চলে যায় তাদের জন্য প্রযোজ্য। আমরা যারা জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলে আছি, দোর্দন্ডপ্রতাপ সিপিএমকে হারিয়েছি তারা বিজেপিতে যাওয়ার কথা ভাবব কোন দুঃখে।” আর অয়নের বক্তব্য,“অনেককেই ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে অন্য কারও কথা কল্পনাও করতে পারি না।”

প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহাও বলছেন, “বিজেপিতে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আসলে রাজনৈতিক ভাবে পেরে না উঠে বিজেপি এসব করছে।” বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদারের পাল্টা দাবি, “আমাদের দলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী লোক দিয়ে এ সব করাচ্ছেন।” জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশিস রায় বলছেন, “এ সব বিজেপির পাগলের প্রলাপ। কে কাথায় পোস্টার মারছে তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজনই বোধ করছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar BJP TMC inner conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE