Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International Women's Day

চেনা ছক ভেঙে অচেনা উড়ান 

বিদ্যুৎ-চালিত তাঁতশ্রমিক ছিলেন। আয় খুব ভাল ছিল না। পাঁচ জনের সংসার সে ভাবে চলত না।

দুই নারী... : টোটো চালিয়ে রোজকার লড়াই করছেন ওঁরা। উপরে, তুলসি। নীচে রাখি। নিজস্ব চিত্র

দুই নারী... : টোটো চালিয়ে রোজকার লড়াই করছেন ওঁরা। উপরে, তুলসি। নীচে রাখি। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার ও সাগর হালদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০১:৩৭
Share: Save:

মেয়ে বলে পিছিয়ে যাননি। সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন কাজ করেছেন। এখন টোটো চালিয়ে সংসার

চালাচ্ছেন তুলসি।

রানাঘাট থানার পায়রাডাঙা এলাকার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে বছর চল্লিশ বছরের তুলসি সিংহকে টোটো চালাতে দেখা যায় নিয়মিত। পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রীতিনগরে তাঁর বাড়ি। বাড়িতে দুই বোন এবং এক ভাই। খুব ছোটবেলায় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাই একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর বাবা এক জন

বিদ্যুৎ-চালিত তাঁতশ্রমিক ছিলেন। আয় খুব ভাল ছিল না। পাঁচ জনের সংসার সে ভাবে চলত না। পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে তুলসি মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরতে পারেননি। বাবাকে সাহায্য করতে বাধ্য হয়েই তুলসি পায়রাডাঙা রেলস্টেশনে বসে ফল বিক্রি করতেন। কিছু দিন পর সেটাও ভাল ভাবে চলল না। তার পর বাড়িতে ঠোঙা তৈরি। শেষে বছর খানেক আগে সেটা ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন।

প্রতিদিন সকাল আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান তিনি। মাঝে একবার খেতে বাড়ি ফেরেন। রোজ বারো ঘণ্টা করে টোটো চালান। এ দিন তুলসি বলেন, “খুব ছোট থেকে চোখের সামনে দারিদ্র দেখেছি। এখনও আমার লড়াই চলছে। রাস্তায় টোটোর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে আয় কমে যাচ্ছে। তবে আমি হাল ছাড়তে রাজি নই।”

স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় রেল-কর্মী আশিস দাস বলেন, “একটা মেয়ে কী ভাবে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে, সেটা তাঁকে না দেখলে ভাবা যায় না।”

লড়াইয়ের গল্পটা সামান্য আলাদা তেহট্টের রাখি মণ্ডলের। তবে বাহন সেই একই। তিনিও মহিলা টোটোচালক। এক দিন সংসার খরচ চালানোর তাগিদে টোটো চালাতে শুরু করেন রাখি। সংসারের আর্থিক দুরাবস্থা দূর করতে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন।

তেহট্টের জিৎপুরে একটি ছোট্ট বাড়িতে রাখি তাঁর অসুস্থ স্বামী, নিজের অসুস্থ বাবা ও অসুস্থ শাশুড়িকে দেখভাল করেন।

তাঁর কাছেই জানা গেল, ২৬ বছর আগে বিয়ে হয় রাখির। সংসারে আর্থিক সমস্যা ছিল। চার বছর আগে আর্থিক সমস্যা দূর করতে টোটো কেনা হয়। তাঁর স্বামী সুজিত মণ্ডলই টোটো চালাতেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য টোটো চালাতে পারছিলেন না। উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ে। অন্য দিকে, রাখির মা মারা যাওয়ার পর অসুস্থ বাবাকেও তাঁদের বাড়িতে এনে রেখেছেন। শাশুড়ির স্বাস্থ্যের অবস্থাও ভাল নয়। তাই বছরতিনেক আগে রাখি বাড়ির পাশে চপের দোকান খোলেন। দোকান চালিয়ে মেয়ের বিয়ে দেন। কিন্তু এর পর আবার টাকার টান পড়ে। রাখির কথায়, ‘‘দু’বছর আগে আর্থিক সমস্যার জন্য রাতে ঘুম হত না। এর পর সিদ্ধান্ত নিই টোটো চালিয়ে সংসার চালাব।’’

ভোরবেলায় বেরিয়ে টোটো চালিয়ে, দুপুরে বাড়ি ফিরে রান্না করেন। স্বামী-বাবা এবং শাশুড়িকে খাইয়ে আবার অর্থ উপার্জনে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রাতে বাড়ি ফিরে আবার সংসারের কাজ।

রাখির স্বামী সুজিত মণ্ডল বলেন ‘‘রাখি দেখিয়েছে মেয়েরাও পারে।’’

জানা গেল, তেহট্টের মহকুমাশাসক মেয়েদের স্বনির্ভর করার প্রকল্পে ওই টোটোচালিকাকে রোল মডেল করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। মহাকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার মেয়েদের স্বনির্ভর করার যে প্রয়াস নিয়েছে, সেখানে রাখি মণ্ডলকে নারীসমাজের রোল মডেল করা

যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International Women's Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE