Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রী’র সঙ্গে বন্ধুর বিয়ে, মানতে না পেরে খুন

বছর পাঁচেক আগের সেই ঘটনার ‘ক্ষত’ যে এখনও বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছে সুকবর শেখ তা বোঝা যায়নি।

মাসাদুলের শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র

মাসাদুলের শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০৫:৪৫
Share: Save:

বন্ধুর স্ত্রী’র সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। তারই পরিণতিতে বিয়ে। কাজের সূত্রে বিয়ের পরেই তাঁদের দিল্লিবাসের শুরু।

বছর পাঁচেক আগের সেই ঘটনার ‘ক্ষত’ যে এখনও বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছে সুকবর শেখ তা বোঝা যায়নি। ইদের সময়ে দিল্লি থেকে ফিরে গ্রামের আড্ডায় আর পাঁচ জনের সঙ্গে তাস খেলতে বসেছিলেন মাসাদুল শেখ (৩৮)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকা উঠে দাঁড়ায় সুকবর। তার পর কোপাতে থাকে মাসাদুলকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসাদুল।

স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে ওই ঘটনার পরে ইসলামপুরের সিসাপাড়া গ্রাম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় বসেছে পুলিশ পিকেটও। ঘটনার পরে সবাই মিলে ধরে ফেলে সুকবরকে। বেধড়ক মারধরের পরে তাকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে বহরমপুরের হাসপাতালে।

পাড়ার লোকজন জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে পাড়ার চায়ের দোকানে বসেছিল তাসের আড্ডা। সুকবরের মতো মাসাদুলও ছিল সেখানে। দু’জনের মধ্যে বাক্যালাপ তেমন না হলেও গত পাঁচ বছরে কোনও রেষারেষি বা বৈরিতাও দেখা যায়নি।

এ দিনও তাস খেলার সময় এ-ওর দিকে তাকিয়ে হেসেছে, এমনও দেখেছেন আড্ডায় উপস্থিত অন্যরা। আচমকাই উঠে দাঁড়ায় সুকবর। তারপর ভোজালি দিয়ে কোপাতে থাকে মাসাদুলকে। প্রাথমিক ভাবে হতচকিত হয়ে পড়ে জনতা। তার পর তাঁরাই সুকবরকে ধরে ফেলে পেটাতে থাকে। মাসাদুল ঘটনাস্থলেই মারা যান।

তবু, স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে নিয়ে ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ছোটেন। লাভ হয়নি। চিকিৎসকেরা জানান, মারাই গিয়েছে মাসাদুল। আহত সুকবরকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

বছর দশেক আগে রানিতলার রেক্সোনার সঙ্গে বিয়ে হয় ইসলামপুর সিসাপাড়ার যুবক সুকবরের। বিয়ের পর কাজের খোঁজে দিল্লিতে পাড়ি দেয় সুকবর। কিছু দিন পরে সেখানে পৌঁছয় তারই প্রতিবেশী মাসাদুল। সেই সময়েই মাসাদুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে রেক্সোনার। তার পর বিয়ে। এলাকা ছেড়ে দিল্লির অন্য পাড়ায় ঘর বাঁধে তাঁরা। কর্মসূত্রে সুকবরও দিল্লিতে থাকে। তবে দেখাসাক্ষাৎ তেমন হয়না।

তবে গ্রামের মানুষজন জানাচ্ছেন, তার পর থেকে দু’জনের দেখা হলেও কথাবার্তা তেমন হয়নি। ইদের সময়ে, দিন দশেকের ছুটিতে গ্রামে ফিরেছিলেন মাসাদুল। সঙ্গে রেক্সোনাও এসেছেন। ঘরে ফেরে সুকবরও। তবে এ কদিনের মধ্যে তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।

মাসাদুলের দাদা পিয়ারুল শেখ বলেন, ‘‘ভাই রেক্সোনাকে বিয়ে করার পর গ্রামে একটি সালিশি সভাও হয়েছিল, সেই সভায় সুকবরকে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে সবকিছু মিটমাটও করা হয়েছিল। ভেবেছিলাম সব কিছু মিটে গেল। কিন্তু ওর যে মনে খুন চেপেছিল, বুঝতেই পারিনি।’’

উঠোনের এক কোনে বসে রেক্সোনাও বলে চলেছে, ‘‘এ কি হল, সবই তো মিটে গিয়েছিল!’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে গণপ্রহারে তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বাঁচলে, তাকে গ্রেফতার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Islampur Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE