বিড়ি কারখানায় কাজ বন্ধ করা ‘বেআইনি’ বলে জানিয়ে দিল রাজ্যের শ্রম দফতর। মুর্শিদাবাদের শ্রম কমিশনার চন্দন দাশগুপ্ত বিড়ি মালিকদের সংগঠনকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার চন্দনবাবু জানান, ১৯৪৭ সালের ইনডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট অ্যাক্ট (শিল্প বিরোধ আইন) অনুযায়ীই এই ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই চিঠি দেওয়া হয়েছে বিড়ি মালিকদের। গত সপ্তাহেই তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়েছিল, কারখানা বন্ধ করলে লে-অফের নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনকে কিছু না জানিয়ে বেশ কিছু বিড়ি কারখানা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
গত তিন সপ্তাহে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওযায় জঙ্গিপুর মহকুমায় কাজ হারিয়েছেন প্রায় চার লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। কিন্তু বিড়ি মালিক সংগঠনের তরফে সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, “আমরা ধর্মঘট করিনি। লক আউট বা কাউকে লে-অফও করা হয়নি। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার টাকা মিলছে না। কারখানায় কাজ বন্ধের দায় মালিকদের নয়।”
ঘটনাচক্রে, যে বিড়ি মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন, তাঁদের অন্যতম শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তাঁর বক্তব্য, “নতুন নোটের জোগান না থাকাতেই বিড়ি শিল্পে এই অচলাবস্থা।” শ্রম দফতর যখন বলছে কারখানা বন্ধ করা বেআইনি, একই দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়ে তিনি কী করে কারখানা বন্ধ করলেন? তার আগে কি তাঁর মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল না? খানিক থতমত খেয়ে সুর বদলে জাকির এ বার দাবি করেন, ‘‘কারখানা তো বন্ধ করা হয়নি! বিড়ির চাহিদা কম থাকায় উৎপাদনে একটু ঢিলে দেওয়া হয়েছে শুধু। আর, ওই চিঠি তো আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে দেওয়া হয়নি, সংগঠনকে দেওয়া হয়েছে। আমি পদত্যাগ করব কেন?’’
একের পর এক বিড়ি কারখানা বন্ধ হওয়ায় ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের হয়ে গলা ফাটাতে আসরে নেমেছে তৃণমূল। যদিও কারখানা খোলানোর বদলে মূলত নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই হইচই করেছে তারা। এ দিনই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিড়ি শিল্পে বিপর্যয় নিয়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু বিড়ি শ্রমিকদের মধ্যে প্রভাব বেশি থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি বা সিপিএম প্রভাবিত সিটুর কোনও নেতা এত দিন শ্রমিক মহল্লায় পা রাখেননি।
এ দিন অবশ্য জঙ্গিপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য এবং সিটুর জেলা সম্পাদক তুষার দে দাবি করেন, নোট নিয়ে সঙ্কট থাকলেও বিড়ি শিল্পে কাজ বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আগেও বিড়ি মালিকেরা তিন-চার সপ্তাহের মজুরি বাকি রেখে কারখানা চালু রেখেছেন। তুষারবাবুর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে চক্রান্ত করেই বিড়ি মালিকেরা রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ বন্ধ করেছেন।” আগামী ৭ ডিসেম্বর মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে ধর্না দেওয়া হবে বলেও তাঁরা জানান।
নড়ে বসেছে কংগ্রেসও। সুতি ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস জানান, বন্ধ বিড়ি কারখানা খোলার দাবিতে আগামী সপ্তাহে বিড়ি মহল্লায় পদযাত্রা করবেন অধীর চৌধুরী। আজ, শনিবার জঙ্গিপুরে দলের নেতাদের বৈঠকে তার দিনক্ষণ চুড়ান্ত করা হবে।
জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক টি বালসুব্রহ্মণ্যম বলেন, “অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা চলছে। সমাধানের রাস্তা এখনও মেলেনি।” সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বিড়ি মালিকেরা কারখানা বন্ধ রাখলে কী হবে? শ্রম কমিশনার জানান, উপরতলার নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি তো প্রশাসনেরই অংশ। দফতর যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই মতো চলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy