Advertisement
E-Paper

জলঙ্গির জলে ডুব দেবে কে, বিসর্জনেও ভয়

নদীতে স্নান করা তাঁর বহু দিনের অভ্যেস। ‘‘এ নিয়মে ছেদ পড়লে কেমন যেন মনে হয়। যেন কী একটা করিনি...,’’ আক্ষেপ করে বলছিলেন মাজদিয়ার পাবাখালির বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর প্রৌড়া বিনাপানি অধিকারী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২২
শিয়ালমারির হাল। নিজস্ব চিত্র

শিয়ালমারির হাল। নিজস্ব চিত্র

নদীতে স্নান করা তাঁর বহু দিনের অভ্যেস। ‘‘এ নিয়মে ছেদ পড়লে কেমন যেন মনে হয়। যেন কী একটা করিনি...,’’ আক্ষেপ করে বলছিলেন মাজদিয়ার পাবাখালির বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর প্রৌড়া বিনাপানি অধিকারী।

এই অভ্যেসটা বজায় রাখতে গিয়েই যে যত বিপত্তি। বাড়ির ধার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চূর্ণীর কালো দুর্গন্ধময় জলে একটা ডুব দিয়েই কোনও মতে ছুট দেন বাড়ির দিকে। তা সেই পথে যেতে যেতেই বিরবির করছিলেন প্রৌড়া, ‘গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে গো’। টিউবঅয়েলের জলে গা-হাত-পা ধুয়ে তবে রক্ষে। এ অবস্থা শুধু বিনাপানিদেবীর নয়। চুর্ণীর তীরবর্তী এলাকার সব বাসিন্দারই কমবেশি এক অভিজ্ঞতা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদিয়া
লাগোয়া বাংলাদেশের দর্শণায় একটি চিনি মিলই এর জন্য দায়ী। ওই মিল থেকে মাঝেমধ্যেই রাসায়নিক ও তরল বর্জ্য পড়ে মাথাভাঙা নদীতে। আর তা থেকে চুর্ণীতে।

স্নান তো দূরের কথা, পুজোর সময় বিসর্জন দিতে গিয়েও জলে নামতে ভয় পান জলঙ্গি নদী ঘেঁষা এলাকার মানুষজন। নোংরা জলে জমেছে প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালা। তা ছাড়াও বাজারের ছোট-বড় নালার মুখ এসে ভিড়েছে শেয়ালমারি, জলঙ্গি বা ভৈরবে। ফলে মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমায় কেবল পদ্মা ছাড়া আর স্নান করার কথা আর কোথাও ভাবা যায় না। এমনকী এই দূষিত জলের ভয়ে শেয়ালমারি বা জলঙ্গির পাশে শ্মশানে এখন আর কেউ দাহ করতে চায় না। কারণ তার পর যে নিয়ম মেনে নদীতে ডুব দিতে হবে। ওই নোংরা কালো জলে কে নামবে?

প্রশাসন অবশ্য গোটা বিষয়টি নিয়ে আগাগোড়াই উদাসীন। আর রাজনৈতিক দলগুলো ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচাতে চুপ।

এক সময়ে জলঙ্গি, শেয়ালমারিতে স্টিমার চলত। এলাকার মানুষের স্নানের জায়গা বলতে ছিল নদীর ঘাট। নদীর মাছ ধরে দিব্য সংসার চলে যেতে মৎস্যজীবীদের। মাছেভাতে থাকতেন সাধারণ মানুষও। ডোমকলের চাঁদেরপাড়া গ্রামের বাবলু হালদারের কথায়, ‘‘একটা সময় নদীটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল আমাদের জীবন। নদীপথেই শহরে যাতায়াত। নদীতে মাছ ধরেই চলত সংসার। এখন কোথাও হাঁটুজল, কোথাও তা-ও নেই। নামতেই ভয় হয়। গোটা এলাকার নোংরা-আবর্জনা ছাড়াও বিষাক্ত রাসায়নিকে ভরে গিয়েছে জল।’’

কী ভাবে? নদীর পাড় দখল করে যে চলছে চাষাবাদ। জমিতে দেওয়া হচ্ছে হাজারো কীটনাশক। আর সেই কীটনাশকই জলে ধুয়ে মিশছে নদীতে। গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। তার জলে বাড়ছে বিষাক্ত রাসায়নিক। ফল? নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাছ।

কচিকাচারা হুটোপাটি করে জলে নামলেই চামড়ায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ইসলামপুরের বাসিন্দা ধীমান দাসের কথায়, ‘‘বর্ষাকাল ছাড়া এখন নদীতে নামতেই ভয় পাচ্ছে মানুষ। নদীতে স্নান করতে নামলেই চামড়ার রোগ বা চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’ ডোমকল স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক দেবাংশু সরকার বলেন, ‘‘পুজোর সময় এক রকম বাধ্য হয়েই বিসর্জন দিতে নামি। কোনও মতে একটা ডুব দিয়েই উঠে আসি। কোনও উপায় যে নেই।’’

Jalangi River Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy