Advertisement
E-Paper

পেটের দায়েই বারুদের স্তূপে, কাঁদছে পরিবার

ততক্ষণে সব শেষ। আগুনে পুড়ে দলা পাকিয়ে গিয়েছে তাঁর স্ত্রীর দেহ। অন্যদের সঙ্গে তিনিও আগুন নেভাতে বালতি-বালতি জল বইলেন।

মৃত বাসন্তী চৌধুরীর বাড়ির কান্নাকাটি। কল্যাণীতে।

মৃত বাসন্তী চৌধুরীর বাড়ির কান্নাকাটি। কল্যাণীতে। ছবি:সুদেব দাস।

সুদেব দাস, অমিতকুমার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৯
Share
Save

এখনও, ৬১ বছর বয়সেও রিকশার প্যাডেলে পা না রাখলে তাঁর সংসার চলে না। ছেলে চটকলে কাজ করে। তাঁর স্ত্রী, পঞ্চাশ পার করা বাসন্তী চৌধুরীকে তাই সংসারের হাল ধরতে কাজ করতে হত। তবে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ চলে যাবে, এটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁর স্বামী দুর্গা চৌধুরী।

অন্য দিনের মতো শুক্রবার সকাল প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ হেঁশেলের কাজ সেরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই বাজি কারখানায় কাজে গিয়েছিলেন বাসন্তী। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন দুপুরের খাবার। দুপুর দেড়টা নাগাদ বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। সে সময় স্নান বাড়িতে স্নান করছিলেন দুর্গা চৌধুরী। কারখানায় কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে আন্দাজ করেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি।

ততক্ষণে সব শেষ। আগুনে পুড়ে দলা পাকিয়ে গিয়েছে তাঁর স্ত্রীর দেহ। অন্যদের সঙ্গে তিনিও আগুন নেভাতে বালতি-বালতি জল বইলেন। কিন্তু শেষরক্ষা আর হল না। আগুন নিভলেও এলাকা থেকে বারুদের গন্ধ তখনও যায়নি। বিকালে কল্যাণীর টালিখোলা পালপাড়ার বাড়িতে বসে দুর্গা চৌধুরী বলেন, "সব শেষ হয়ে গেল। সংসারে অনটনের কারণেই এই বয়সে স্বামী-স্ত্রী দু'জনে কাজ করছিলাম। আগে জানলে ওকে কাজে যেতে দিতাম না।"

একই অবস্থা ওই এলাকার স্কুল লেনের সাহা পরিবারের। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে দুর্গা সাহার (৪০)। তাঁর ছেলে প্রণব সাহা বলেন, "যেহেতু বাড়ির কাছেই ওই কারখানা, তাই অন্য দিনের মতো মা এ দিন দুপুরেও বাড়িতে খেতে এসেছিল। তার পরেই ফোন পাই দুর্ঘটনার।" সরু গলির পাশে ছোট পাকা বাড়িতে বাবা-মাকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার এক দুর্ঘটনায় শেষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণী রথতলা এলাকায় বেশ কয়েকটি বস্তি রয়েছে। পরিবারের পুরুষেরা কেউ ভ্যান চালান। কেউ আবার টোটো। অনেকে দিনমজুরের কাজ করেন। আর মহিলারা অনেকেই ওই বাজি কারখানার কাজে যুক্ত। আবার কল্যাণী পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পাশেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙনপাড়া এলাকা। সেখানকার বাসিন্দা অঞ্জলি বিশ্বাস (৬২) ও রুমা সোনার (৩৫) দু'জনেই এ দিন সকালে কারখানায় গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

বিকালে রুমার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্বামী, পেশায় ভ্যানচালক পিন্টুপ্রসাদ সোনার। তিনি বলেন, “ভ্যান চালিয়ে আমাদের সংসার চলে না। ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলাম। তাই স্ত্রী বাজি কারখানায় কাজে গেলেও আমি বাধা দিইনি। কিন্তু এ ভাবে যে ওকে হারাব তা বুঝিনি।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalyani

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}