Advertisement
E-Paper

বাবা চৌকির নীচে, অন্ধকারে উধাও মৌলবি

একটি বাড়িতে শুধু আলো জ্বলছে। লোকজন হাঁটাচলা করছেন পা টিপে টিপে। কথা বলছেন নিচু গলায়। কোনও আড়ম্বর নেই। পাড়ারও কেউ জানেন না, ও বাড়িতে বিয়ে।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৪৬
শবনম, মোমিনা ও জাকিরুন (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র।

শবনম, মোমিনা ও জাকিরুন (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র।

পৌষের জমাট কুয়াশা। মাঝেমধ্যে রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙছে শেয়ালের হাঁক।

একটি বাড়িতে শুধু আলো জ্বলছে। লোকজন হাঁটাচলা করছেন পা টিপে টিপে। কথা বলছেন নিচু গলায়। কোনও আড়ম্বর নেই। পাড়ারও কেউ জানেন না, ও বাড়িতে বিয়ে।

সাকুল্যে জনা কুড়ি বরযাত্রী বসে আছেন বছর আঠেরোর পাত্রকে ঘিরে। মৌলবি ও রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে ‘কবুল’ বললেই ল্যাটা চুকে যাবে। কিন্তু গোল বাধালেন রেজিস্ট্রার, ‘‘দু’জনেই তো নাবালক। তিন হাজার টাকা খরচা করতে হবে।’’ বাড়ির লোকজনেরও গোঁ, ‘‘বারোশোর বেশি একটা টাকাও দিতে পারব না।’’

এ দিকে কনের পোশাক পরে ফুঁপিয়ে চলেছে বছর এগারোর মোমিনা খাতুন। সদর দরজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছে, ‘‘কেউ তো এল না! জাকিরুন আপা কি খবর পায়নি?’’ তখনই অন্ধকার ফুঁড়ে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল দু’টি গাড়ি। প্রথম গাড়িটা বিডিও অফিসের, তাতে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী জাকিরুন বিবি ও কন্যাশ্রী যোদ্ধা শবনম আনসারি। পিছনের গাড়িতে হরিহরপাড়া থানার পুলিশ।

মুহূর্তে মোটরবাইক ফেলে অন্ধকার খেত ধরে ছুটলেন রেজিস্ট্রার। তাঁর পিছনে মৌলবি। ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেলেন পাত্র ও বরযাত্রীরা। জাকিরুনকে জড়িয়ে ধরে মোমিনা বলল, ‘‘জানতাম আপা, তুমি আসবে।’’

কিন্তু বাড়ির লোকজন কোথায়? বছর নয়েকের এক বালিকা জানায়, কেউ নেই। সবাই পালিয়েছে। কিন্তু পুলিশের নজর বলে কথা! চৌকির নীচে টর্চের আলো পড়তেই কাঁথা সরিয়ে বেরিয়ে আসেন মোমিনার বাবা, মোমিন শেখ।

আরও পড়ুন: ডাহা ফেল ইডি-সিবিআই, মুখ পুড়ল মোদী সরকারের

বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ এমন হইচইয়ে মুর্শিদাবাদের খলিলাবাদের কাঁচাঘুম তখন ভেঙে গিয়েছে। নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যে সহজ নয়, বাবা জানতেন। চারপাশে এখন কড়া নজর কন্যাশ্রী যোদ্ধা, স্বয়ংসিদ্ধা, পুলিশ-প্রশাসনের। আর আছেন হরিহরপাড়ার জাকিরুন বিবির মতো মানুষ। সে সব মাথায় রেখেই মেয়ের বিয়েটা নিজের বাড়ি হরিহরপাড়ার আব্দুলপুর থেকে না দিয়ে চলে এসেছিলেন শ্যালিকার বাড়িতে।

তা হলে কন্যাশ্রী যোদ্ধারা খবর পেল কী করে? জাকিরুন জানাচ্ছেন, মোমিনা নিশ্চিত ছিল না ঠিক কবে বিয়ে। কিন্তু আন্দাজ করে বন্ধুদের জানিয়ে রেখেছিল। বুধবার তাদের বাড়ি বন্ধ দেখেই সন্দেহ হয় কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের। জাকিরুনের মুখে সাফল্যের হাসি, ‘‘ছ’মাসে ৫১টি নাবালিকার বিয়ে রুখে দেওয়া গেল।’’ হরিহরপাড়ার যুগ্ম বিডিও উদয়কুমার পালিত বলেন, ‘‘কোন রেজিস্ট্রার ও মৌলবি বিয়ে দিতে এসেছিলেন, খোঁজ করা হচ্ছে। মোমিনার লেখাপড়ার দায়িত্ব এখন থেকে আমাদের।’’

বাবা মুচলেকা দিয়েছেন, মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না। মোমিনার মা বলছেন, ‘‘মোমিনা বলেছিল, ‘আগে লেখাপড়াটা শেষ করতে দাও।’ অভাবের সংসার বলে ওর কথায় কান দিইনি। এমন ভুল আর করব না।’’

Minor Marriage Marriage Registrar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy