Advertisement
E-Paper

হাতে লাটাই, নজর আকাশে

প্রায় একশো বছর আগের কথা। নবদ্বীপে তখন অনেক বর্ধিষ্ণু জমিদারের বাস। গাজনের সঙ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো, নানা বিষয়ে তাঁদের মধ্যে চলত রেষারেষি। তাঁদের অন্যতম শিবচন্দ্র সিংহ। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন তিনি ঘুড়ি ওড়াতেন।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

চিরশত্রু পূর্ণচন্দ্রের কাছে হেরে গিয়ে শিবচন্দ্র রাগে-দুঃখে দাউদাউ করে জ্বালিয়ে দিলেন কয়েকশো ঘুড়ির স্তূপ। আছড়ে ভাঙলেন রূপো বাঁধানো কাঠের লাটাই। বিরাট প্রাসাদের মতো বাড়ির ছাদ থেকে নামার আগে নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলে গেলেন, ‘পরের বার দেখবো!’

প্রায় একশো বছর আগের কথা। নবদ্বীপে তখন অনেক বর্ধিষ্ণু জমিদারের বাস। গাজনের সঙ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো, নানা বিষয়ে তাঁদের মধ্যে চলত রেষারেষি। তাঁদের অন্যতম শিবচন্দ্র সিংহ। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন তিনি ঘুড়ি ওড়াতেন। প্যাঁচ খেলতে গিয়ে তাঁর কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরে আনতে পারলেই ঘুড়ি পিছু এক টাকা করে পুরস্কার দিতেন শিবচন্দ্র। একশো বছর আগে এক টাকার মূল্য ছিল অনেক। ফলে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকাল থেকেই সিংহবাড়ির চারপাশে ভিড় জমতো। তাঁর ঘুড়ি ভোকাট্টা হলেই দৌড় শুরু করতো ছেলে-বুড়োর দল। কাটা ঘুড়ি ধরলেই নগদ এক টাকা। সারা দিনে শিবচন্দ্র কয়েকশো ঘুড়ি ওড়াতেন।

কিন্তু সে বার ছবিটা বদলে গেল। শিবচন্দ্রের ঘুড়ি ধরার জন্য ছেলে-ছোকরার দল সে ভাবে ছুটছে কই! তাঁদের নজর অন্য প্রান্তের রায়বাহাদুর পূর্ণচন্দ্র বাগচির বাড়ির দিকে। সে বাড়ির ঘুড়ি কাটলেই পিলপিল করে লোক ছুটছে। খবর নিয়ে জানা গেল, বাগচি বাড়ির ঘুড়ির গায়ে ১০ টাকার নোট আটকানো আছে। যিনি ঘুড়ি ধরবেন, ওই দশ টাকা তাঁর নগদ প্রাপ্তি। সে বছর এক টাকার জন্য কেউ আর সিংহ মশাইয়ের ঘুড়ি ধরতে ছোটেনি। পরের বছর শিবচন্দ্র কী প্রতিশোধ নিয়ে ছিলেন তা জানা যায়নি। তবে শোনা যায়, তিনি ঘুড়ির কাঠামো তৈরি করার জন্য বাঁশের বদলে সরু রূপোর তার ব্যবহার করেছিলেন। বাড়াবাড়ি এতটা না হলেও কয়েক বছর ধরেই বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর হিড়িক পড়ছে। পেটকাটি, চাঁদিয়াল, ময়ূরপঙ্খী, শতরঞ্চি, হরহরিয়া, মুখপোড়া, তিলককাটিয়া, কালোটেক্কা, চাপরাশ, হাফ চাপরাশ, মোমবাতির মতো চেনা ঘুড়ির পাশাপাশি বাজারে এসেছে হরেক রকমের ঘুড়ি। নানা ডিজাইনের ছাপা ঘুড়ি, ছোটা ভীম, বেনটেনের মতো কার্টুন ঘুড়ি এবং পাখি, প্রজাপতি আকারের ঘুড়িও প্রচুর বিক্রি হয়েছে। দাম তিন টাকা থেকে ১০ টাকার মধ্যে। নবদ্বীপের ঘুড়ি বিক্রেতা রাজু পোদ্দার ও সঞ্জয় ঘোষেরা জানাচ্ছেন, নতুন জমানায় বদলে গিয়েছে কেনাবেচার রকমও। একটা-দুটো নয়, এখন ডজন হিসেবে ঘুড়ি কিনছেন ক্রেতারা। নবদ্বীপের অস্থায়ী ঘুড়ি বিক্রেতা সুজিত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘লোকের ঘুড়ির প্রতি ঝোঁক আবার বাড়ছে।’’

ভাদ্রের গুমোট গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, মাটিকে অবজ্ঞা করে সারা দিন আকাশে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গার ঝাঁকের দিকে তাকিয়ে মাঝেমধ্যেই গর্জে উঠল পাড়া—ভোকাট্টা। স্মার্টফোন থেকে কিছুটা সময় হলেও চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকানো, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এটাও কিন্তু কম প্রাপ্তি নয়।

Vishwakarma puja Nabadwip Kite fight
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy