Advertisement
E-Paper

‘চোখ বন্ধ করে খাসির মাংস নিয়ে যান, দু’নম্বর প্রমাণে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার’

পাত্রবাজারের মাংসবিক্রেতা আলি শেখ আবার দুই নম্বর প্রমাণ করলে ২০০০১ টাকা পুরস্কার দেবেন বলে ঘোষণা করে ফ্লেক্স টাঙিয়েছেন মাস দুই হল।

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৩০
পুরস্কারে যে ভরসা মিলছে তা মানছেন অনেক ক্রেতাই।

পুরস্কারে যে ভরসা মিলছে তা মানছেন অনেক ক্রেতাই।

কৃষ্ণনগর পুরসভার গেটের মুখে ছোট্ট দোকানঘরের সামনের খুঁটিতে গলায় দড়ি বাঁধা খাসির। বাজারের ব্যাগ হাতে মাঝবয়সীকে দোকানি বলেন, ‘‘ফ্লেক্সটা দেখুন দাদা। নো টেনশন। চারিদিকে মাসি, শুধু আমরাই খাসি। দু’নম্বর প্রমাণে নগদ কুড়ি হাজার টাকা পুরস্কার। চোখ বন্ধ করে নিয়ে যান।’’

মাংস কাটতে কাটতে শামিম শেখ বলেন, ‘‘ফ্লেক্স টাঙিয়েছি দিন পনেরো হল। যদিও ব্যবসা করছি পনেরো বছর। এখন বাজার বড্ড খারাপ। চারিদিকে নকল। কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। আসল খাসি কাটলেও লোকে ধাড়ি ভাবে।’’ তিনি জানান, তাই অনেক ভেবে এই পথ নেওয়া। সপ্তাহে একদিন টোটো করে সারা শহর ঘুরে পুরস্কারের ঘোষণার প্রচারে সাড়াও মিলছে ভালই, জানালেন শামিম।

পাত্রবাজারের মাংসবিক্রেতা আলি শেখ আবার দুই নম্বর প্রমাণ করলে ২০০০১ টাকা পুরস্কার দেবেন বলে ঘোষণা করে ফ্লেক্স টাঙিয়েছেন মাস দুই হল। আলি বলেন, ‘‘নকলের ভিড়ে আমাদেরও নকল ভাবছেন সবাই। বড্ড ছোট লাগে নিজেকে, যখন বন্ধুরাই দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘আজ কটা ধাড়ি কাটলি?’ ভাবুন!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মাংসের আসল-নকল

• পাঁঠা: পুরুষ ছাগল। সুস্বাদু। তবে বড় হলে গায়ে গন্ধ হয়। মাংসের কেজি ৬০০ টাকা।
• খাসি: অণ্ডকোষ কেটে খোজা করা পুরুষ ছাগল। খোজা করার কারণে তাড়াতাড়ি বাড়ে। রেওয়াজি হয়। মাংসের কেজি ৬০০ টাকা।
• ধাড়ি: মেয়ে ছাগল। মাংস ছিবড়ে হয়। স্বাদে খাসি বা পাঁঠার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। দাম কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা থেকে শুরু। চাহিদা নেই। খাসির মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে খাসি বলে বিক্রি করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

হাটে একটা পাঁচ কেজি ওজনের খাসি যেখানে ৩০০০ টাকা দাম, সেখানে ওই ওজনের একটা ধাড়ি ১৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায় পাওয়া যায়। হোটেলগুলো ওই মাংস ৩০০, ৪০০ টাকা কেজিতে কিনে নিয়ে গিয়ে খাসি বলে চালায়। আলি জানান, এখন ওষুধ, মুদিখানা সব হোম ডেলিভারি হচ্ছে। তাই মাংসের হোম ডেলিভারি চালু করেছেন।

কৃষ্ণনগর কলেজ মোড়ে বছর কুড়ি আগে মাংসের দোকান দিয়েছিলেন খোকন মণ্ডল। তাঁর ছেলে শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক বছর আগে পুরসভায় নিয়ে গিয়ে ছাগল কাটাতে হত। আর পুরসভা থেকে ছাগলে সিল দিয়ে দেওয়া হত। খাসি হলে নীল সিল, আর ধাড়ি হলে লাল। একটা ভরসার জায়গা ছিল মানুষের। তবে অসাধু দোকানিরা অনেকেই সেই লাল সিলটা চেঁছে তুলে ফেলে খাসি বলেই চালিয়ে দিতেন।’’

খোকন জানান, এর পর পুরসভা এক সময়ে এই ছাপ দেওয়া বন্ধ করে দিল। ‘‘খরিদ্দার ধরে রাখতে বাবা প্রায় সতেরো বছর আগে পুরস্কার চালু করেন। তখন মাংসের কেজি ছিল ১৬০ টাকা। দোকানের ওপর ‘২ নম্বর প্রমাণে ১০০১ টাকা পুরস্কার’ লিখে টিনের বোর্ড ঝুলিয়েছিলেন বাবা। এর পর মাংসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ বাড়িয়ে ৫০০১ টাকা পর্যন্ত করেন।’’

পুরস্কারে যে ভরসা মিলছে তা মানছেন অনেক ক্রেতাই। পাত্রবাজারে বাজার করতে আসা অমিতাভ ঘোষ জানালেন, ‘‘আগে দাম দিয়ে কিনেও মন খুঁতখুঁত করত। এখন নিশ্চিন্তে কিনছি।’’

Krishnanagar Goat Meat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy