Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেতাদের টাকা দিয়েই মাটি কাটছি

সাতশিমুলিয়া গ্রামে ওই জমির মালিক অসীম ভট্ট বহু দিন ধরেই আন্দামানে থাকেন। গ্রামে তাঁর আত্মীয়স্বজন অসীমবাবুর সঙ্গে কথা বলে ৭৬৪ দাগের ওই তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার সিদ্ধান্ত নেন।

পাচার: সাতশিমুলিয়া গ্রাম থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই ট্রাক্টরে। নিজস্ব চিত্র

পাচার: সাতশিমুলিয়া গ্রাম থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই ট্রাক্টরে। নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ   
হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

নিয়ম ভেঙে মাটি কাটার অভিযোগ উঠল হরিণঘাটা ব্লকের কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতের সাতশিমুলিয়া গ্রামে। যাঁরা অবৈধ ভাবে মাটি কাটছেন তাঁরা স্পষ্ট দাবি করেছেন, তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতাকে টাকা দিয়ে তাঁরা এটা করছেন। তৃণমূলের একাধিক স্থানীয় নেতা সে কথা স্বীকারও করেছেন। দাবি করেছেন, জলের তহবিলে টাকা কম বলেই তাঁরা এই পথ নিয়েছেন।

সাতশিমুলিয়া গ্রামে ওই জমির মালিক অসীম ভট্ট বহু দিন ধরেই আন্দামানে থাকেন। গ্রামে তাঁর আত্মীয়স্বজন অসীমবাবুর সঙ্গে কথা বলে ৭৬৪ দাগের ওই তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার সিদ্ধান্ত নেন। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা শুকদেব সরকার নামে এক জন ওই জমির মাটি কিনছেন বলে এলাকার লোক অভিযোগ জানিয়েছেন। সাইফুল মণ্ডলের ট্রাক্টরের করে সেই মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু পুকুর কাটার আগে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছ থেকে যে অনুমতি নেওয়া উচিত তা নেওয়া হয়নি। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বৃহৎ জনস্বার্থ জড়িত না থাকলে কখনই রাতারাতি এ ভাবে তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটা যায় না।

ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক চিন্ময় বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ওই জমিতে পুকুর কাটার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ওটা বেআইনি ভাবে করা হচ্ছে। হানা দিয়ে এটা বন্ধ করা হবে।’’ এলাকার লোকের দাবি, দিন সাতেক আগে শুকদেবের লোকজন মাটি কাটার যন্ত্র এনে জমি থেকে মাটি তোলা শুরু করেন। এলাকার সাধারণ মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা দাবি করেন, এই পুকুর কাটার ফলে পাশের জমির ক্ষতি হবে। জমি নীচু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ কানে তোলেননি বলে অভিযোগ।

শুকদেব বলছেন, ‘‘অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে সেই প্রক্রিয়া চলছে।’’ অনুমতি ছাড়া মাটিকাটা শুরু হল কী ভাবে? কোনও রাখঢাক না-করেই শুকদেবের জবাব, ‘‘এলাকার শাসক দলের নেতাদের টাকা দিয়ে এটা করছি।’’ তবে নির্দিষ্ট করে কোনও নেতার নাম উল্লেখ করতে চাননি তিনি। কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গণেশ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’’ কিন্তু ওই অঞ্চলের তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বলছেন, ‘‘আসলে দলের কয়েক জন মিলে মোটা টাকার বিনিময়ে এই কাজ করছে।’’

শাসক দলের এক স্থানীয় নেতা মিল্টন সরকার তো বলেই দিলেন, ‘‘দলের তহবিলে টাকা নেই। তাই আমরা টাকা নিয়ে এ কাজ করছি।’’ আর সাইফুলের দাবি, ‘‘এলাকার লোকের সঙ্গে কথা বলে আমরা কয়েক জন মিলে মাটির কারবার করছি। এর জন্য আবার অনুমতি নেওয়ার কী আছে?’’

ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বান্টি পাল অবশ্য জানিয়েছেন, দলের নাম করে স্থানীয় কোনও নেতা টাকা নেবে, এটা কখনই চলতে দেওয়া
হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Land Land Mafia Money TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE