Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সাবস্টেশন হয়নি, অন্ধকারে নবগ্রাম

মাদ্রাসা বোর্ড, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দোরগোড়ায়। কিন্তু এই ভরা মাঘেও লোডশেডিংয়ে কাহিল নবগ্রাম ব্লক। দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল ছাত্রছাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবগ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৩
Share: Save:

মাদ্রাসা বোর্ড, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দোরগোড়ায়। কিন্তু এই ভরা মাঘেও লোডশেডিংয়ে কাহিল নবগ্রাম ব্লক। দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল ছাত্রছাত্রীরা। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দাবি, বোরো চাষের জল দিতে গিয়েই সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তি।

সমস্যাটা আজকের নয়। ২০১০-১১ সালেই নবগ্রাম থেকে পাঁচগ্রাম যাওয়ার পথে কিশোরপুরে অস্থায়ী সাবস্টেশন তৈরি করে এই বিদ্যুতের জোগান বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। একটি পরিবার জমি দিতে রাজি হলেও কাজ আর এগোয়নি।

ফল ভুগতে হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে। নবগ্রাম ব্লকের নারায়ণপুর, গুড়াপাশলা, অমৃতকুণ্ড, পাঁচগ্রাম, রসুলপুর, হজবিবিডাঙা, মহুরুল, অনন্তপুর ,কুশমোড়, শীলগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা, পরে বেলা ১১টা থেকে ৩টে, আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা, রাতে ১১ থেকে ২টো বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে এলাকার লোকজনের সন্ধ্যার টিভি দেখা থেকে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা, সব শিকেয় উঠেছে।

নবগ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সায়ন হালদার, কিরণ মার্জিত, ঋত্বিক মণ্ডল, নরেন কিস্কুদের আক্ষেপ, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু রোজ সন্ধ্যায় অন্তত তিন ঘণ্টা করে লোডশেডিং। কিছু পরিবার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইনভার্টার বসিয়েছে। কিন্তু সেগুলোও ঠিক মতো চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। শীলগ্রামের কবিতা মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘বড় এলইডি টিভি কেনা হয়েছে বাড়িতে। কিন্তু কোনও অনুষ্ঠানই দেখা হয় না। টিভি কেনাটাই ফালতু হল!’’ বাড়ির পাম্পে জল তোলা থেকে মিক্সি বা ইনডাকশন হিটার চালানো, এমনকী মোবাইলে চার্জ দিতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আবার চাষিরাও বিদ্যুতের দখল ছাড়তে নারাজ। স্থানীয় চাষি বীরেন মার্ডি বলেন, ‘‘সরকারকে জানিয়েই মেশিনে জল তুলে মাঠে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ধান না হলে পেটের ভাত কোথা থেকে আসবে!’’

নবগ্রাম ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্লকে বিদ্যুৎ পরিষেবা নামে কিছু আছে বলেই মনে হয় না। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা। আমাদের ব্লকে এক হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী। তিন বার স্মারকলিপি দিয়েও কাজ হয়নি।’’ নবগ্রামের সিপিএম বিধায়ক কানাই মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় নবগ্রামের মানুষকে। বিষয়টি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দফতরের কর্তাদের লিখিত ভাবে বারবার জানিয়েছি। আমরা সরকারে থাকতে, ২০১০-১১ সালে কিশোরপুরে অস্থায়ী পাওয়ার হাউস গড়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে না।’’

যে পরিবার জমি দিয়েছিল, তা নবগ্রাম থেকে জেলা পরিষদের সদস্য তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ এনায়েতুল্লার। তিনি জানান, অস্থায়ী ভাবে পাওয়ার স্টেশন তৈরির জন্য পাঁচ বছর আগে তাঁর শ্বশুরমশাই ৮৭ শতক অর্থাৎ প্রায় তিন বিঘা জায়গা দিয়েছিলেন। জমিটা তখন গর্ত মতো ছিল। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সেই সময়ের জেলা কর্তারা তাঁদেরই গর্ত বুজিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। চাকরি থেকে অবসরের সময়ে পাওয়া প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে শ্বশুরমশাই তা বুজিয়ে দেন।

এনায়েতুল্লার দাবি, ‘‘ওই টাকা আমাদের ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। ওরা তা দেয়নি। তার পরেও আমরা ওই জায়গায় স্থায়ী পাওয়ার স্টেশন করতে দিতে রাজি। কিন্তু দফতরের গাফিলতিতে এই জায়গা পড়ে আছে। চাষও হচ্ছে না, আবার লোকে বিদ্যুৎও পাচ্ছে না।’’

তা সত্ত্বেও জমি নিচ্ছে না কেন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা? সংস্থার জিয়াগঞ্জ ডিভিশনাল ম্যানেজার মোহন কিস্কুর দাবি, কিশোরপুরের ওই জমির কথা তাঁর জানাই নেই। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, চিহ্নিত জমির মধ্যে কিছুটা খাস জমিও ঢুকে গিয়েছে। বিধায়কের বক্তব্য, জমি নিয়ে দর কষাকষিও আর একটা কারণ। তাঁর দাবি, ‘‘জমি মালিকেরা প্রথমে যে দাম চেয়েছিলেন, পরে তা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই কারণেই জট পাকিয়েছে।’’ যদিও এনায়েতুল্লা তা স্বীকার করতে চাননি।

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানান, কিশোরপুরে পাওয়ার হাউস চালু করার ক্ষেত্রে জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাই এগোনো যাচ্ছে না। তবে নবগ্রামে ৫ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসানো হচ্ছে। সেটি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শুরু করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Load shedding Nabagram Substation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE