Advertisement
E-Paper

সঙ্গে টাটকা প্রতীক নিয়েই প্রচারে নির্দল প্রার্থী

রহিমা বিবি মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তা বেশ, তা বেশ। প্রতীকই যখন বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন সকলেই আপনাকে মনে রাখবেন। কই তা হলে...’’

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
গাড়িতে আনারস ঝুলিয়ে প্রচার নির্দল প্রার্থীর। জঙ্গিপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

গাড়িতে আনারস ঝুলিয়ে প্রচার নির্দল প্রার্থীর। জঙ্গিপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

প্রার্থী প্রচারে বেরিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছে প্রতীকও! তা-ও আবার হাতে আঁকা, মডেল কিংবা নকল-টকল নয়, একেবারে সত্যিকারের!

ক’দিন আগে দু’হাতে আনারস নিয়ে অপরিচিত লোকজনকে হনহনিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন রহিমা বিবি। আনারস দু’টি রহিমার সামনে ধরেই নিজের পরিচয়টা দিলেন তিনি— ‘‘আমি প্রসাদ হালদার। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী। আমার চিহ্ন এই যে, হাতেই ঝুলছে।’’

রহিমা বিবি মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তা বেশ, তা বেশ। প্রতীকই যখন বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন সকলেই আপনাকে মনে রাখবেন। কই তা হলে...’’

এ বারে যেন ছিটকে সরে গেলেন প্রসাদ। তার পরে জিভ কেটে বলছেন, ‘‘না, না ভাবি। এখন এটা দেওয়া যাবে না। দিলেই তো নির্বাচন বিধিভঙ্গের দায়ে পড়ে যাব। তবে কথা দিচ্ছি, জিতলে গোটা লোকসভার লোকজনকে আনারস খাওয়াব।”

সুতির অজগরপাড়ার রহিমার বাড়ি থেকে প্রার্থী ঢুকলেন পরের বাড়িতে। প্রসাদের সঙ্গে একটি গাড়িতে প্রায় একশোটি আনারস বাঁধা রয়েছে। সেই আনারস নিয়েই তিনি প্রচারে নজর কেড়েছেন। দেওয়াল লিখন নেই। পোস্টার নেই। ছাপেননি হ্যান্ডবিলও।

সুতির বহুতালির বাসিন্দা প্রসাদ বলছেন, “কী হবে ও সব করে! আমার লক্ষ্য, প্রতীকের সঙ্গে লোকজনকে পরিচয় করানো। তাই শিলিগুড়ি থেকে ৪০ টাকা করে ১০০টি আনারস কিনে এনে গাড়িতে ঝুলিয়ে দিয়েছি। আমি লোকজনের সঙ্গে পরিচয় করছি। তাঁরাও পরিচিত হচ্ছেন আমার প্রতীকের সঙ্গেও। খরচও বাঁচল। আসল কাজটাও হয়ে গেল।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রসাদের এমন কায়দা দেখে নবাবের জেলার অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে ইসলামপুর চকের কার্তিক দত্তকে। ফরওয়ার্ড ব্লকের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন কার্তিক। তাঁর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, এক বার অন্তত তাঁকে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু দল কথা রাখেনি।

ক্ষোভে, অভিমানে কার্তিক শেষতক নির্দল প্রার্থী হয়েই ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েন। আর কার্তিকের কপালও তেমনি! নির্বাচন কমিশন তাঁকে প্রতীক দিল— কুকুর।

কার্তিকও বিস্কুট, পাউরুটি খাইয়ে জ্যান্ত সারমেয়র দলকে বাগে এনে তাদের নিয়েই প্রচার শুরু করেছিলেন। প্রতীক দেওয়ালে আঁকা না হলেও জ্যান্ত কুকুর দেখেই তামাম এলাকা জেনে গিয়েছিল কার্তিক কোন চিহ্নে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বহু বছর আগের সেই ঘটনার কথা এখনও ইসলামপুর চকের মুখে মুখে ঘোরে।

প্রসাদের সঙ্গেও আনারস দেখে এলাকার ভোটাররা বলছেন, ‘‘প্রতীক চেনাবার কৌশলটা কিন্তু অভিনব।” প্রসাদ পেশায় মৎস্যজীবী। প্রচার ও অন্য বিষয়ে বন্ধুরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। প্রসাদ বলছেন, “এক লক্ষ টাকা বাজেট রয়েছে। টাকা থাকলে আনারসের বন্যা বইয়ে দিতাম এলাকায়। ইচ্ছে ছিল, আরও কয়েক হাজার আনারস কিনে পাড়ায় পাড়ায় ঝুলিয়ে রাখার। তা হলে প্রচারটা আরও জমকালো হত। কারও অনুমতিও নিতে হত না। নির্বাচন কমিশনেরও বলার কিছু থাকত না। কিন্তু সে আর হল কই ?”

Independent Candidate Election Campaign Pinapple
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy