পাহারায় ইভিএম। ফাইল চিত্র।
বাসের আলি মোল্লা এখনও সটান ফিরে যেতে পারেন চব্বিশ বছর আগে। ভরা বাম জমিতে, তখনও শক্ত পাথরের মতো কংগ্রেসের জমাট গড় মুর্শিদাবাদ। সেই সন্ধেটা এখনও মনে পড়লে এই বৈশাখেও শীত-শীত করে তাঁর। ‘‘ভোট নয় আমরা ভয়ে থাকতাম ফল প্রকাশের রাতে। শাহাদিয়াড়, আমিনাবাদে তখন হাতে মাথা কাটে কংগ্রেস। সে বার লোকসভা ভোটে মান্নান হোসেন জিতলেন। ফল প্রকাশ হতেই দরজায় কড়া নেড়ে হাজির কংগ্রেসের বাহিনী— ‘হয় টাকা ছাড়, না হয় গ্রাম ছাড়!’’ অন্তত মাস কয়েকের জন্য, পরিস্থিতি থিতিয়ে আসার আশা জিইয়ে আমিনাবাদ শূন্য করে সে সময়ে কত মানুষ যে হারিয়ে যেতেন দূরের কুটুম ঘরে, এখনও মনে আছে বাসের আলির মতো অনেকেরই।
আপাতত শান্তি কল্যাণ আমিনাবাদ। কিন্তু অন্যত্র? আসুন, আলাপ করিয়ে দিই ডোমকলের মিজানুর রহমানের সঙ্গে। গোয়ালে গরু তুলে রোজা-ক্লান্ত মিজানুর বলছেন, ‘‘পর পর দু’টো ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূলের লোকজন। এ বার তাদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছি। ফল প্রকাশের পর কী হবে বুঝতে পারছি না। একটা আতঙ্ক তো আছেই, দেখি কী হয়!’’
নির্বাচনের রক্তস্রোতে অভ্যস্ত মুর্শিদাবাদ জানে, ভোটের সকালে যে বিবাদ ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো পেঁচিয়ে-পাকিয়ে বাতাসে ওঠে তা ছড়িয়ে পড়ে ফল প্রকাশের দিনে। সেই চাপা ভয়, চেনা আতঙ্ক ফের যেন এসেছে ফিরে, মুর্শিদাবাদের গ্রামে-মফস্সলে-পাড়ায়-চায়ের দোকানে।
নির্বাচন কমিশনের ঢালাও প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘আছে বাহিনী, রোখে কে’— তা নিছক ‘কথার কথা’ই মনে করছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কথার কথাই তো! না হলে বুথের ঘেরাটোপে কুপিয়ে খুন হল কংগ্রেস কর্মী, আর আধা সেনার জওয়ান নির্বিকার গলায় বললেন, ‘হমারা কাম হ্যায় ইভিএম রকসা করনা!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বুথের দরজায়, কখনও ৯৪ কখনও বা একশো শতাংশ বাহিনী মোতায়েন করে ‘শান্তি’র ভোটের বার্তা দিলেও জংলা উর্দির আধাসেনা যে ভরসাদায়ক নয়, বিজেপি থেকে তৃণমূল, কংগ্রেস থেকে সিপিএম— সকলের ‘অনাস্থাতেই’ তা স্পষ্ট। তাদের কাজকর্মে যে মানুষও তেমন বুকে বল পাচ্ছেন, এমনটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। বহরমপুরের শিক্ষক সমীরণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যেখানে রুখে দাঁড়ানোর কথা সেখানে ওঁরা (কেন্দ্রীয় বাহিনী) পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর ভোটের লাইনে মানুষকে ভয় পাইয়ে বাহবা কুড়োলেন।’’ জঙ্গিপুরের ভ্যানচালক আখতার আলির কথাতেও মিলছে সেই একই সুর, ‘‘ভোট দিতে গিয়ে অকারণ লাঠিপেটা খেলাম ওঁদের কাছে। কোনও ভরসা নেই!’’ প্রশ্নটা তাই থেকেই যাচ্ছে, ফল প্রকাশের পরে, একই ছবির পুনরাবৃত্তি হবে না তো! কে তা হলে রক্ষাকর্তা?
দিন কয়েক আগেই নির্বাচনের সকালে, হরিহরপাড়া দাপিয়ে রাজ্যের শাসক দলের এক দল কর্মী জানিয়ে গিয়েছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কত দিন বাঁচাবে? তার পরে?’’ কমিশন তাদের মোতায়েনের মেয়াদ বাড়িয়েছে ২৭ মে পর্যন্ত। সত্যিই তো, তার পরে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy