প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘ম্যায় ভি চৌকিদার হুঁ’। ছবি: রয়টার্স।
চৌকিদার!
ছোট্ট এই একটি শব্দ নিয়ে গোটা দেশ মুখর। সমাজ-মাধ্যমে রঙ্গ-ব্যঙ্গ-টিপ্পনি-দাবি-পাল্টা দাবির বিরাম নেই।
লোকসভা ভোটের মুখে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের পাল্টা জবাবে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘ম্যায় ভি চৌকিদার হুঁ’। তার পর থেকেই হইহই কাণ্ড! কিন্তু সত্যি সত্যিই যাঁরা দীর্ঘ দিন চৌকিদারি করেছেন, তাঁরা কী বলছেন?
রাজ্য সড়ক লাগোয়া টালির ছাউনি দেওয়া বাড়ি। উঁচু দাওয়ায় বসে খকখক করে কাশছিলেন চণ্ডীচরণ দাস। এ নাম সরকারি খাতায় থাকলেও তামাম নাজিরপুর তাঁকে চেনে চণ্ডী চৌকিদার বলেই। কেমন আছেন? প্রশ্নটা শুনেই রুখু গলায় তাঁর জবাব, ‘‘নিজের চোখেই তো দেখছেন!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দেশের প্রধানমন্ত্রীও এখন নিজেকে চৌকিদার বলছেন। আপনি কি শুনেছেন?
এ বার একেবারে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন চণ্ডী, ‘‘ভারী আমার চৌকিদার এসেছেন! প্রধানমন্ত্রী চৌকিদার হলে ওঁকে পাহারা দিতেই লোক লাগে কেন? আমরা তো একটা বল্লম আর লণ্ঠন হাতে সারা গ্রাম পাহারা দিয়েছি।’’
বছর চুয়াত্তরের অবসরপ্রাপ্ত চৌকিদার চণ্ডী বলে চলেন, ‘‘তখন মাস গেলে ৬৫ টাকা হাতে পেতাম। তাতে কি আর সংসার চলে? দিনে দিনমজুরি, রাতে চৌকিদারি করে দিন কেটেছে। সবার বেতন বাড়ল। আর আমাদের বেলায় লবডঙ্কা! আর এখন পেনশনের ছ’হাজার টাকায় চাল কিনব না ওষুধ কিনব ভাবতে ভাবতেই মাথাখারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী নিজেকে চৌকিদার বলছেন। এ দিকে প্লেনে করে ঘুরে পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন!’’
ইসলামপুরের এশেরপাড়ার বছর একষট্টির এরশাদ আলি আবার বলছেন, ‘‘গত বছর অবসর নিয়েছি। টাকা-পয়সা, অভাবের কথা বাদই দিলাম। কিন্তু তখন চৌকিদারের সম্মান ছিল। চোরেরা আমাদের ছায়া মাড়াত না। আর এখন সব নানা কাণ্ড কারখানা করে নিজেরাই নিজেদের চৌকিদার বলছে! শুনতেও খারাপ লাগে।’’
এরশাদের কথায়, ‘‘বাবার কাজটা পেয়েছিলাম। কেউ কখনও আঙুল তুলতে পারেননি। আর এখন নেতা-মন্ত্রীরা দিনের আলোয় চুরি করে আবার চৌকিদার সাজছে। মুখে অনেক কথা বলা সহজ। কাজে করে দেখানো কিন্তু খুব কঠিন।’’
একটা সময় চৌকিদার শব্দটি খুব চেনা ছিল। বাড়ির দুষ্টু ছেলেদের জব্দ করতে গব্বর সিং নয়, চৌকিদারের নাম নিতেন মহিলারা। ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক সময় চৌকিদারি করতেন বীরেন দাস। তাঁর কথায়, ‘‘মাইনে কম। পদোন্নতি নেই। ঘরে টনটনে অভাব। কিন্তু কখনও মাথা নিচু করিনি। অনেকে অনেক প্রলোভন দেখিয়েছে। কিন্তু চৌকিদার পদটার কখনও অসম্মান হতে দিইনি। ওঁরা যে নামের আগে চৌকিদার লিখছেন, সততার সঙ্গে তার সম্মান রাখতে পারবেন তো?’’
ভরদুপুরে দাওয়ায় বসে ধুঁকছেন চণ্ডীচরণ! ঘরে প্রেসক্রিপশন পড়ে আছে। ওষুধ কেনার টাকা নেই। ম্লান হাসেন চণ্ডীচরণ, ‘‘মোদীও চৌকিদার! তা হলে দেশ চালাবে কে? আর সবাই যদি চৌকিদারি করতে শুরু করেন তা হলে দেশটার অবস্থাও তো আমার হাভাতে সংসারের মতো হয়ে যাবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy