মুকুটমণি অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সৈনিকেরা বাদ। লম্বা টানাপড়েনের পরে রানাঘাট কেন্দ্রে বরং আনকোরা মতুয়া মুখের উপরেই ভরসা রাখল বিজেপি।
নিহত বিধায়ক তথা মতুয়া নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী, কোনও দিন রাজনীতি না-করা রূপালী বিশ্বাসকে দাঁড় করিয়ে ইতিমধ্যে চমক দিয়েছে তৃণমূল। বাদকুল্লা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরুণ চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারীকে প্রার্থী করে পাল্টা দিল বিজেপিও। বস্তুত, চার প্রধান দলের প্রার্থীর মধ্যে মুকুটমণিই এক মাত্র পুরুষ। তৃণমূলের মতো বাম এবং কংগ্রেসও মহিলা প্রার্থীর উপরেই ভরসা রেখেছে।
রানাঘাট কেন্দ্রে কে বিজেপির প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে এত দিন জল্পনা চলছিল সর্বস্তরে। কখনো শোনা গিয়েছে দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারের। কখনও আবার মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ অর্চনা মজুমদার বা বাগদার গত নির্বাচনের প্রার্থী মতুয়া ঘনিষ্ঠ বিভা মজুমদারের নাম ভেসেছে। ২০১৫-য় কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রার্থী, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নামও শোনা যাচ্ছিল কিছু সূত্রে।
সব হিসেব ভণ্ডুল করে দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয় কৃষ্ণগঞ্জের নঘাটার বাসিন্দা মুকুটমণি অধিকারীর নাম। যাঁর সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক পরিচিতি এত দিন ছিল না, বিজেপির মিটিং-মিছিলেও যাঁকে কোনও দিন দেখা যায়নি। তবে তাঁর বাবা ভূপাল অধিকারী বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার তফসিলি জাতি ও জনজাতি সেলের সহ-সভাপতি। একদা বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বছর দেড়েক আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। মতুয়া হওয়ার সুবাদে ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
এসএসকেএম থেকে ডাক্তারি পাশ করার পরে কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে কিছু দিন কর্মরত ছিলেন মুকুমণি। পরে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বাদকুল্লার হাসপাতালে এসেছেন। তিনি কি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে উতরোতে পারবেন? বছর তিরিশের মুকুটমণি বলেন, “আগে পড়াশোনা করতেই সময় কেটে গিয়েছে। সে ভাবে সক্রিয় রাজনীতি করা হয়ে ওঠেনি। নতুন দায়িত্ব পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”
প্রশ্ন হল: কেন এ রকম এক জনকে প্রার্থী করল বিজেপি? মতুয়া মুখ দলে কম ছিল না। তবে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ রানাঘাটে কোনও পক্ষকে না চটাতেই এ হেন নতুন মুখ বাজারে আনা?
জগন্নাথ বলছেন, “দল যাকে যোগ্য মনে করেছে, তাকেই প্রার্থী করেছে। এর মধ্যে কোন্দলের কোনও বিষয় নেই। সকলে এক সঙ্গে জয়ের জন্য ঝাঁপাব।” দলের অন্দরে তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত, দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিক এক সুরেই বলছেন, “প্রার্থী ঠিক করেছেন দলের নেতৃত্ব। এর মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল কোথা থেকে আসছে? মানুষ ভোট দেবে নরেন্দ্র মোদীকে দেখে, আমাদের দেখে নয়।”
নতুন প্রার্থী পেয়ে দলের কে কতটা খুশি আর কে কতটা হতাশ, তা এখন আর হলফ করে বলার উপায় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy