Advertisement
E-Paper

বিয়ের নামে সটান চালান যৌনপল্লিতে

চাপড়ার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গাঁয়ের মেয়েটা ঠিক করে ফেলেছিল, গ্রামতুতো কাকিমার সঙ্গে সে-ও চলে যাবে দিল্লি। সেখানে কাজ করে সুখে থাকবে। মনের কথা বলেওছিল স্কুলের এক সহপাঠীকে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০১

স্কুলের বন্ধুদের চুল কি রেশমি!

বড্ড লোভ হয় ক্লাস এইটের মেয়েটার— তার চুলও যদি এ রকম ঝিলমিলে হত!

কিন্তু তার জন্য যে নিয়মিত শ্যাম্পু করা দরকার। দিনমজুর বাবা সংসার ঠেলেই কাহিল, মেয়ের জন্য দামি শ্যাম্পু আনবেন কী করে? তবু মায়ের কাছে এক দিন ভাল শ্যাম্পু চেয়েছিল মেয়েটা। তাতে উল্টে জুটেছিল বকুনি, “দু’বেলা ঠিক করে খাওয়া জোটে না! লজ্জা করে না তোর?”

সেই দিনই চাপড়ার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গাঁয়ের মেয়েটা ঠিক করে ফেলেছিল, গ্রামতুতো কাকিমার সঙ্গে সে-ও চলে যাবে দিল্লি। সেখানে কাজ করে সুখে থাকবে। মনের কথা বলেওছিল স্কুলের এক সহপাঠীকে।

শুনেই চমকে উঠেছিল ‘কিশোরী বাহিনী’র সদস্য সেই সহপাঠী। খবর দিয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে নারী পাচার নিয়ে কাজ করে আসা চাপড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। সঙ্গে-সঙ্গে ওই কিশোরীর বাড়ি চলে যান সংস্থার প্রতিনিধিরা। চলে কাউন্সেলিং। ওই সংস্থাটি এখন জেলার চাইল্ডলাইনের নোডাল সংস্থা। তাদের সিটি কো-অর্ডিনেটর জাকির হোসেন মল্লিক বলেন, “কাউন্সেলিং করতে গিয়েই বুঝেছি, সামান্য একটু সুখ-আহ্লাদের লোভ থেকেই আসে বিপদ।”

ওই কিশোরীকে বোঝানো গেলেও আটকানো যায় নি বাংলাদেশ সীমান্ত গ্রামের আর এক কিশোরীকে। তার দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা দিনমজুর। বিয়ের দেনা সামলে কোনও রকমে সংসার টেনে চলেছেন। মেয়ে যায় টিউশন নিতে। পাশে বসা বন্ধুদের নিত্যনতুন চুড়িদার দেখে তার লোভ হয় খুব। মোবাইলগুলোও কী সুন্দর! কিন্তু বাবা দেবে কোথা থেকে?

মেয়েটার মনের হাল বুঝে কথাটা পেড়েছিল তার ছোটকাকার শ্বাশুড়ি — দিল্লি গেলে ভাল কাজ আছে! যা ইনকাম, বাড়িতে টাকা পাঠিয়েও ভাল থাকা যাবে। হাল ফ্যাশনের চু়ড়িদার, চওড়া মোবাইল, দামি লিপস্টিক, সব জুটে যাবে। সেই নিশির ডাকে এক দিন কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল বছর ষোলোর কিশোরী। বেশ কিছু দিন পরে দিল্লি ও হরিয়ানা সীমান্তে বদর থানা এলাকা থেকে যখন তাকে উদ্ধার করা হল, অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তাকে।

শুধু যে কাজের টোপ দিয়েই অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, তা নয়। বিয়ে করে সুন্দর একটা জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করার নজিরও আছে বহু। মোবাইলে মিসড কল থেকে এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল হাঁসখালির ক্লাস ইলেভেনের এক কিশোরীর। যুবকটি তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, বিয়ে করে রাজরানি করে রাখবে।

এক দিন কাউকে কিছু না জানিয়ে এক কাপড়ে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর স্টেশনে হাজির হয়েছিল মেয়েটা। সেখান থেকে সোজা চালান হয়ে যায় বিহারের গয়ায় এক যৌনপল্লিতে। শেষে এক খদ্দেরের সাহায্যে তাঁরই ফোন থেকে মেয়েটা যোগাযোগ করে বাড়িতে। বলে, “তোমরা আমাকে বাঁচাও। এই অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না।” তাকে উদ্ধার করা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তত দিনে সে মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত।

এখন আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট দামি গাড়ি, দামি পোশাকের টোপ দিয়ে থেকে গরিব পরিবারের মেয়েদের ভিন্ রাজ্যের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়ারও চল হয়েছে। জাকিরের কথায়, “চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে-করতে হাঁফিয়ে ওঠা এই কিশোরীরা একটু ভাল থাকার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সেই সুযোগেই তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে হাতছানি দেওয়া হয়। আর অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই সেই আগুনে ঝাঁপ দেয় তারা।”

(চলবে)

Human Trafficking Chapra Marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy