কাল, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এই বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যার নিরিখে নদিয়ায় ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে মেয়েরা। শুধু এ বার বলে নয়, গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা প্রতি বছরই বেশি থাকছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ছেলেদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়ছে?
২০২৫ সালে নদিয়ায় মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সম্ভাব্য সংখ্যা ৫৯৬৩১ জন হতে চলেছে। এঁদের মধ্যে ছাত্রী ৩০৯৭৮ জন এবং ছাত্রের সংখ্যা ২৮৬৫৩ জন। ফারাক প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি। যা ২০২৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বার নদিয়ায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ছিল ৫৭৮৩২ জন। তার মধ্যে ছাত্র ২৮০৮৯ এবং ছাত্রী ২৯৭৪৩ জন ছিল। ২০২৩ সালে ফারাকটা ছিল সব চেয়ে কম। সে বার বয়সজনিত জটিলতায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পেরেছিল খুব অল্পসংখ্যক পড়ুয়া। ছাত্র ছিল ১৪১০৫ জন এবং ছাত্রী ১৪৯৪৩ জন। ছাত্র এবং ছাত্রীর মধ্যে এই ফারাক চোখে পড়ার মতো ছিল ২০২২ সালে। করোনা-পরবর্তী প্রথম মাধ্যমিকে সে বার নদিয়া জেলা থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল মধ্যে ৩১৯৩৯ জন ছাত্র আর ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৪৫৮৫ জন।
এমনিতেই সরকার-নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলিতে উঁচু শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। প্রাথমিক থেকে যত মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের দিকে যাওয়া যায়, পড়ুয়ার সংখ্যা ততই কমে যাওয়া এখন প্রথায় পরিণত হয়েছে। সদ্য প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভর্তির নিরিখে মাধ্যমিকে স্কুলছুটের সংখ্যা শতকরা ৩৬ শতাংশের বেশি এবং উচ্চ মাধ্যমিকে সেটা প্রায় ৫৪ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষামহল। অনেকেই মনে করছেন, লেখাপড়া করার জন্য মেয়েরা যত বেশি আর্থিক সহায়তা সরকারি ভাবে পাচ্ছে, সেই তুলনায় ছেলেদের জন্য তেমন কোনও আর্থিক সহায়তা নেই। অভিভাবকেরা মনে করছেন, মেয়ে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেই নানা প্রকল্পে টাকা পাওয়া যাবে। লেখাপড়ার মানের চেয়েও এখন সেই দিকে আগ্রহ বেশি।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো নানা অর্থনৈতিক সাহায্যের ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করছে। বাবা-মা জানেন, মেয়ে পড়াশোনা করলে ওই সরকারি প্রকল্পের টাকা মিলবে। কিন্তু ছেলেদের জন্য সে ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি, কর্মসংস্থান ভীষণ ভাবে কমছে। একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবছে না। বরং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে রোজগারের কথা ভেবে।”
ছাত্র এবং ছাত্রীদের সংখ্যায় ফারাক প্রসঙ্গে এবিটিএয়ের নদিয়া জেলা সম্পাদক সৌমেন পাল বলেন, “ছেলেরা এবং অভিভাবকেরা এটা স্পষ্ট বুঝেছেন, লেখাপড়া শিখে এই রাজ্যে কিচ্ছু হবে না। তাই তারা স্কুল ছেড়ে হাতে-কলমে উপার্জনমুখী কাজ শিখতে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই ফারাক দিন দিন আরও বাড়বে।”
বিজেপির নদিয়া জেলা শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক অমিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা রাজ্য সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা। গোটা পশ্চিমবঙ্গ এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের হাবে পরিণত হয়েছে। তাই স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)