Advertisement
E-Paper

হাট বসে রাস্তার উপরে, যানজটে নাকাল মাজদিয়া

সকাল সাড়ে ১০টা। সামনে বাস-লরির লম্বা লাইন। পিছনেও সেই একই ছবি। রিক্সায় বসে দর দর করে ঘামছিল ক্লাস টেনের ছাত্রীটি। হাতে আর মাত্র ১৫ মিনিট সময়। তার মধ্যে সে স্কুলে পৌছতে পারবে কিনা, তা বুঝতে না পেরে সমানে চালককে তাড়া দিয়ে যাচ্ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৭:৩২
নিত্যদিনের যান-যন্ত্রণা। মাজদিয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিত্যদিনের যান-যন্ত্রণা। মাজদিয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

সকাল সাড়ে ১০টা। সামনে বাস-লরির লম্বা লাইন। পিছনেও সেই একই ছবি। রিক্সায় বসে দর দর করে ঘামছিল ক্লাস টেনের ছাত্রীটি। হাতে আর মাত্র ১৫ মিনিট সময়। তার মধ্যে সে স্কুলে পৌছতে পারবে কিনা, তা বুঝতে না পেরে সমানে চালককে তাড়া দিয়ে যাচ্ছিল।

রিক্সাচালক কাঁচুমাচু মুখে বললেন, ‘‘কী করে কোন দিক দিয়ে যাই বল দেখি। প্রতিদিনই তো সেই এক ঝামেলা। কাল থেকে বরং আর একটু আগে বেরিও দিদি।’’

ঘটনাস্থল, মাজদিয়া রেল স্টেশনের সামনের রাস্তা। আর সমস্যার মূলে মাজদিয়ের কুখ্যত যানজট। কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়কে নিত্যদিনের যানজট এলাকার বাসিন্দাদের কাছে মাথাব্যাথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পড়ুয়া থেকে শুরু করে রোগী—সকলকেই ভুগতে হচ্ছে। সমস্য দূর করা দূরে থাক, দিন দিন বাজার যে ভাবে রাস্তায় উঠে আসছে, তাতে এই সমস্যা ‘ক্যানসার’-এর আকার নিচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

তবে যানজটের মূল কারণ মাজদিয়ার মতো ব্যস্ত জায়গায় কোনও বাসস্ট্যান্ড না থাকা। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি তোলা হলেও, বাস স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা আজও করা যায়নি।

নির্দিষ্ট কোনও বাস স্ট্যান্ড না থাকায় বাজারের ভিতরে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকে বাস। তার উপরে আছে টোটো, ভ্যান আর অটোর দৌরাত্ম। আর এসব ঠেলে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যেন রীতিমতো যুদ্ধ। সঠিক সময়ে বাড়ি থেকে বের হলেও নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারে না ছাত্র-ছাত্রীরা। একই ভাবে যানের জটে আটকে ফসকে যায় ট্রেনও।

কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের ছ’টি রুটের প্রায় ৪২ টি বাস এই মাজদিয়ার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ভাজনঘাট, গেদে, খালবোয়ালিয়া-সহ সীমান্তবর্তী একটা বিরাট এলাকার মানুষ মাজদিয়ার উপর নির্ভরশীল। সেই সঙ্গে শিয়ালদহ-গেদে শাখায় মাজদিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন। রাজ্যের মাধ্যে আম ও খেজুর গুড়ের অন্যতম বড় বাজার। ফলে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই মাজদিয়ার উপর দিয়ে যাতায়াত করেন।

মাজদিয়া বাজারের পাশেই রেল স্টেশন। তার উল্টো দিকে কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়ক। যত দিন যাচ্ছে এই রাজ্য সড়ক দখল করে বসছে বাজার। বিশেষ করে রবিবার ও বুধবার হাট বসে।

সেই রাস্তার এক পাশ দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে একাধিক বাস। তার উপরে দিন দিন বাড়ছে টোটো গাড়ির সংখ্যা। বাড়ছে অটোও। ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে মাজদিয়ার মূল সড়ক দিয়ে করাই কঠিন হয়ে পড়ে এলাকার বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত সরকার বলেন, ‘‘আমাকে রোজ কলকাতায় যেতে হয়। কিন্তু এই যানজট পেড়িয়ে স্টেশন পর্যন্ত পৌছানোই কঠিন হয়ে পড়ে।’’ সব থেকে করুণ অবস্থা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। এই এলাকায় দু’টি স্কুলের পাশপাশি রয়েছে একটি কলেজও। মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন মন্ডল বলেন,‘‘যানজটের কারণে বাজার এলাকা দিয়ে তো যানচলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের।’’

রাস্তার উপর বাজার বসার জন্য সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। মাজদিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা বহু চেষ্টা করেছি, যাতে রাস্তার উপরে বাজা‌র না বসে। কিন্তু কিছুই হয় নি।’’ তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসনের সহযোগীতায় দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন ঠিক থাকার পরে আবার সেই একই আবস্থা।

নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড নেই বলেই আমরা রাস্তায় বাস দাঁড় করাতে বাধ্য হই।’’ কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কাকলী হালদার বলেন,‘‘মাজদিয়ায় একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর জমিতে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স এবং বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হবে।’’

Traffic jam Majhdia Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy