Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Marraige

Blood donation: বিয়ের আসর থেকে গিয়ে রক্ত দিলেন পাত্র

পাত্র সুতির কুসুমগাছি গ্রামের ওয়াসিম রেজা। পাত্রী রঘুনাথগঞ্জের কানুপুর গ্রামের মুসমিকা ইয়াসমিন।

রক্ত দিচ্ছেন ওয়াসিম।

রক্ত দিচ্ছেন ওয়াসিম। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২২ ০৭:০০
Share: Save:

খবরটা এল বিয়ের আসরেই। সবে কাজি এসে বিয়ে পড়া শুরু করেছেন। পাত্র সুতির কুসুমগাছি গ্রামের ওয়াসিম রেজা। পাত্রী রঘুনাথগঞ্জের কানুপুর গ্রামের মুসমিকা ইয়াসমিন। বিয়ে বাড়ি জুড়ে চলছে আনন্দ, উৎসব।

আর ঠিক তখনই মোবাইলে এল ফোনটা। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সুতির বংশবাটী গ্রামের আড়াই বছরের সায়ন শেখ। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে এসেছে ৩.৮ গ্রাম/ ডেসিলিটারে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে । হাসপাতালে মজুত নেই “ও পজিটিভ” রক্তও। সাহায্য চেয়ে ফোনটা এসেছে বন্ধু জিয়াউল আলমের কাছ থেকেই। ওয়াসিমের যে সোমবার বিয়ে জানা ছিল না বন্ধুর। তাই ফোন করে বিয়ের কথা জানতে পেরেই অস্বস্তিতে পড়লেন। বললেন, “থাক, আমি অন্য কাউকে দেখছি।”

অপর প্রান্তে বিয়ের ব্যস্ততা থামিয়ে বন্ধুকে আশ্বস্ত করলেন ওয়াসিম। “বিয়ে তো কী? বিয়ের কাজ শেষ করেই যাচ্ছি। হাসপাতালেই অপেক্ষা কর।”
বিয়ে বাড়িতে তখন শোরগোল পড়েছে বেশ। এ কী কাণ্ড? বিয়ের আসর ছেড়ে কেউ হাসপাতালে এ ভাবে ছোটে রক্ত দিতে? সব অস্বস্তি কাটাতে এগিয়ে এলেন পাত্রের বাবা মতিউর রহমান। পেশায় চাশবাস। সবকে থামিয়ে বাবা বললেন “ওকে যেতে দিন। শুভদিনে শুভকাজ মঙ্গলের। রক্ত দান মানে এক জনের জীবন দান। তাই অন্যকে জীবন দান করেই শুরু হোক না ওদের নতুন জীবন।”

স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে আছেন সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী অবাক বিস্ময়ে। যেন থমকে দাঁড়িয়েছে উতসব। সম্মতি দিয়ে স্ত্রী মুসমিকা বললেন “সাবধানে যান।”

সোমবার দুপুর ১১ টা নাগাদ ৮টি গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কুসুমগাছি থেকে বিয়ে করতে কানুপুরে এসেছিলেন ওয়াসিম। স্নাতক পাশ করে এখন কলকাতায় চাকরি করেন। পাত্রী মুসমিকা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বিয়ের দিনেই এভাবেই শুরু হল তাদের দাম্পত্য জীবনের।

দু’কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে রক্ত দিয়ে যখন ফিরলেন ওয়াসিম তখন বিকেল গড়িয়েছে। বিয়ে বাড়িতে সবাই অপেক্ষায় আছেন পাত্রের জন্য। খাওয়াদাওয়া সেরে সন্ধে নাগাদ রওনা দিলেন কুসুমগাছির দিকে।

বংশবাটীর রাজমিস্ত্রি সানারুল শেখের এক মাত্র ছেলে সায়ন। ৬ মাস বয়সেই ধরা পড়ে থ্যালাসেমিয়াই আক্রান্ত সে।

মা সবিতা খাতুন বলছেন, “সেই থেকে প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয় সায়নকে। সাধারণ গ্রুপের রক্ত বলে সমস্যা হয়নি কখনও। কিন্তু এ বারে পুর নির্বাচনের জন্য রক্ত শূন্য হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। রক্তদাতা পেতেও সমস্যা হয় না। কিন্তু এ বারে কোনও মতেই জোটাতে পারছিলাম না রক্তদাতাও। তাই এক পরিচিতকে ফোন করে বলি। তিনিই যোগাযোগ করিয়ে দেন ওয়াসিমের সঙ্গে। আমাদেরও জানা ছিল না ওর এ দিন বিয়ে। হাসপাতালে বিয়ের পোশাক দেখেই জানলাম। খুব খারাপ লাগছিল। এ ভাবে ওর হাসপাতালে আসায়। তবু সে যেভাবে এসেছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ তার কাছে। রক্ত পেতেই ছেলে এখন সুস্থ।”

পাত্র ওয়াসিম বলছেন, “সুতিতে আমরা একটি সংগঠন চালাই ‘আমরা করব রক্তদান’। আমি তার সদস্য। কিন্তু কলকাতায় থাকি। তাই সংগঠনের কাজ সেভাবে করতে পারি না। তাই এই প্রথমবার রক্তদানের সুযোগটা যখন পেলাম তখন কাজে লাগালাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marraige Blood Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE