এ ভাবেও ঘুরে দাঁড়ানো যায়?
শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল প্রমাণ করে দিয়েছেন, ইচ্ছে আর মনের জোর থাকলে নিশ্চয় যায়।
কে শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল?
১৯৮৮ সালে অগস্টের এক সকালে বেহালার বুড়োশিবতলার একটি দোকান থেকে কেনা ভেজাল তেল খেয়ে যাঁরা পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ তাঁদেরই একজন। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন। সকালে আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি ভাগ্যের খোঁজে কলকাতায় ট্যাক্সি চালাতে আসা যুবক শ্রীকৃষ্ণ।
অন্ধকার আছড়ে পড়েছিল ওই যুবকের জীবনে। মাস দুয়েক হাসপাতালে কাটানোর পরে সটান লড়াইয়ে ময়দান। ঠিক মতো হাঁটার ক্ষমতা নেই, এমন লোককে কে কাজ দেবে? শেষতক নিজেদের মতো করে বাঁচার লড়াই শুরু করেন শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর স্ত্রী রাধা। শ্রীকৃষ্ণ চানাচুর বিক্রি করেন। রাধা নির্মাণ শ্রমিক। তাঁদের ছেলে ইঞ্জিনিয়রিং-এর ছাত্র, ছোট মেয়ে স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া।
সম্প্রতি রানাঘাটের গৌরিসালের ওই দম্পতির এই লড়াইকে সম্মান জানিয়েছে নদিয়া জেলা শ্রম দফতর। দিন কয়েক আগে কল্যাণীতে শ্রমিক মেলায় মঞ্চে তাঁকে সম্মান জানান কারামন্ত্রী অবনীমোহন জোয়ারদার। ভেজাল তেল কাণ্ডের সময় তিনি ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার। মঞ্চে দাঁড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘‘কখনও ভিক্ষা করিনি, কারও করুণা চাইনি, চাইবও না।’’
ওই দম্পতির এমন লড়াইয়ের কথা প্রথম জানতে পারেন রানাঘাটের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার বিতান দে। বিতানবাবু জানান, অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সরকারি পরিচয়পত্রের পাশাপাশি নানা সুবিধা রয়েছে। রাধার পরিচয়পত্র হারিয়ে গিয়েছে। সেই কারণে তিনি এসেছিলেন বিতানবাবুর কাছে। বিতানবাবু সাহায্য করতে রাজি হলে রাধা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনও রকম দয়া তিনি চান না। পরে অবশ্য সরকারি সাহায্য জেনে তিনি নিতে রাজি হন।
পঙ্গু হওয়ার পরে দীর্ঘ দিন আইনি লড়াইয়ের পর মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তারপর নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে গৌরিসালে থিতু হয়েছেন। স্নাতক স্তরে বড় মেয়ে ভাল ফল করেছিলেন। অর্থাভাবে তাঁকে পড়াতে না পেরে বিয়ে দিতে বাধ্য হন ওই দম্পতি। এখনও তাঁরা ,সে আফশোস করেন। তবে এ বার তাঁরা পণ করেছেন, যেমন করেই হোক ছেলে-মেয়েকে তাঁরা উচ্চশিক্ষিত করবেনই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy