কয়েক মাসের প্রেম। আর্থিক অনটন, পরিবারের আপত্তির মধ্যে পণ করেছিলেন দু’জনে একসঙ্গে থাকার। তার পর ১০ বছরের দাম্পত্য। দুই সন্তান। কিন্তু ‘সুখের সংসারে’ বাদ সাধল স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক। অভিযোগ, ছেলের গৃহশিক্ষকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন বধূ। এখন স্ত্রীকে ফিরে পেতে জেলায় জেলায় পুলিশের দুয়ারে ঘুরছেন স্বামী। পুলিশের কাছে তাঁর আর্জি, ‘বৌকে খুঁজে দিন।’
গত বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে পুলিশ সুপারের অফিসে হাজির হয়েছিলেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা গোপালচন্দ্র দাস। কী চাই? পুলিশের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্ত্রীর ‘পালিয়ে যাওয়া’র ঘটনা বর্ণনা করেন। তার পর আর্জি জানান, স্ত্রীকে যেন খুঁজে দেয় পুলিশ। জানা গিয়েছে, শুধু কৃষ্ণনগর নয়, ইতিমধ্যে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা পুলিশের কাছে এ নিয়ে দরবার করেছেন গোপাল। অনেক জায়গায় পুলিশ তাঁকে বুঝিয়ে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু গোপাল নারাজ। তিনি আবার পরের থানা কিংবা অন্য জেলা পুলিশের অফিসে হাজির হয়েছেন। তাঁর ধনুক ভাঙা পণ, ‘‘বাড়ি ফিরলে বৌ নিয়েই ফিরব।’’
গোপাল জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানার ডিহিপাড়ায়। গত এক বছর হল তাঁর স্ত্রী দুই সন্তানকে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন। তাঁর সন্দেহ, ছেলের গৃহশিক্ষককে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন স্ত্রী। কিন্তু এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কোনও খোঁজ পাননি। দুই সন্তানেরও হদিস পাননি। তাই পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে জেলায় জেলায় ঘুরছেন।
হঠাৎ কৃষ্ণনগরে কেন? গোপা জানান, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কৃষ্ণনগর এলাকার যোগসূত্র আছে। নবদ্বীপে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। স্ত্রীকে ফিরে পেতে সেখানেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘খোঁজ তো দিলেনই না। শ্বশুর-শাশুড়ি আমায় দ্বিতীয় বিয়ে করার উপদেশ দিলেন!’’
আরও পড়ুন:
যুবকের আর্থিক সঙ্গতি নেই। আগে ভিন্রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন কাজ ছেড়ে স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজছেন তিনি। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর নবদ্বীপের এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক হয় তাঁর। কিছু দিন পরে বিয়ে করেন দু’জনে। বর্তমানে দম্পতির মেয়ের বয়স ১০ এবং ছেলে ৮ বছরের। স্ত্রীকে নিয়ে আগে গুজরাতে ছিলেন গোপাল। সেখানে দু’জনেই কাজ করতেন। ফিরে আসার কিছু দিন পরে দুই সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন গোপালের স্ত্রী। গোপালের অভিযোগ, ‘‘২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ দুই সন্তান-সহ স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন গৃহশিক্ষক।’’ গত আট মাস ধরে স্ত্রী এবং সন্তানকে অনেক খুঁজেছেন। গত বছর সেপ্টেম্বর নবদ্বীপ থানায় লিখিত অভিযোগও করেন। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার এসপি-র কাছে গোপাল অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রীকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে দু’-এক বার নাকি স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। গোপালের দাবি, ‘‘ওরা ভাল নেই। ওদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। আর ওই মাস্টারের (গৃহশিক্ষক) বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন আমায় মারধর করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করছে তারা।