Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গলা থেকে নামল বোঝা, মুক্ত কাশেম

গলার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত সেলাইয়ের দাগটা স্পষ্ট। অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে ক্ষত। কিন্তু এত দিনের অভ্যাস যে। তাই অজান্তেই বারবার হাতটা চলে যাচ্ছে গলায়। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে গলাটা।

হাসপাতালের নার্সের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের পরে কাশেম শেখ। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালের নার্সের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের পরে কাশেম শেখ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

গলার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত সেলাইয়ের দাগটা স্পষ্ট। অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে ক্ষত।

কিন্তু এত দিনের অভ্যাস যে। তাই অজান্তেই বারবার হাতটা চলে যাচ্ছে গলায়। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে গলাটা।

‘‘তা লাগুক,’’ মৃদু হেসে বললেন প্রৌঢ়। আর লাগবে না-ই বা কেন। গত ১৪ বছর ধরে তো বোঝাটা বয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। বিশাল আকৃতির একটা টিউমার। এ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল, এক দোর থেকে অন্য দোরে ঘুরতে হয়েছে, কিন্তু সুরাহা হয়নি।

অবশেষে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হল টিউমারটি। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক অনির্বাণ জানা। তার পর থেকে নামটা করলেই কপালে হাত তুলছেন কাশেম শেখ।

তিন বছর ধরে কলকাতার এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজে ঘুরে কোনও লাভ হয়নি। তারিখের পর তারিখ পড়েছে। নানা পরীক্ষা করে দেখেছেন ‘ডাক্তারবাবুরা’। কিন্তু অস্ত্রোপচার আর হয়নি। অথচ সময় চলে গিয়েছে। জলের মতো খরচ হয়েছে টাকা।

পেশায় কাঠের মিস্ত্রী। স্ত্রী ছেড়ে চলে গিয়েছে বহু দিন আগে। বাড়িতে তাই একাই থাকেন। তেমন যোগাযোগ নেই আত্মীয়দের সঙ্গেও। ফলে দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে যেন পাথরের মতো ভারি হয়ে উঠছিল টিউমারটা। এক দিন তাই কোনও কিছু না ভেবে ছুটলেন কৃষ্ণনগরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। ঘটনাচক্রে সেখানে রোগী দেখতে এসেছিলেন অনির্বাণবাবু।

অস্ত্রোপচারের আগে যেমন ছিল টিউমারটি।

টিউমারটা ভাল করে পরীক্ষা করে শক্তিনগর হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান, অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় নেই। দিনক্ষণ ঠিক করে কাশেমকে চলে আসতে বলা হয় হাসপাতালে। তাই করেন কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়ক পাড়ার বাসিন্দা কাশেম। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। সে সময় অনেকেই বলেন, “ঝুঁকি হয়ে যাবে। এসএসকেএম ফিরিয়ে দিয়েছে যেখানে।” দুশ্চিন্তার কারণও ছিল যথেষ্ট। টিউমারটির ওজন ছিল প্রায় দেড় কেজি। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, “বড় বেশি ঝুঁকি নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এ সব ক্ষেত্রে স্নায়ুতে আঘাত লাগতে পারত। গলার স্বর নষ্ট হয়ে যেতে পারত।” তাই বিপদ সামাল দিতে আগে থেকেই তৈরি রাখা হয়েছিল রক্ত। ফাঁকা রাখা হয়েছিল সিসিইউ। এমনকী প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রেরও ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে সবের আর প্রয়োজন পড়েনি। সফল হয় অস্ত্রোপচার।

অনির্বাণবাবুর কথায়, “আমাদের সামর্থ অল্প। পরিকাঠামোরও ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু তার ভিতরেও এই ঝুঁকিগুলো না নিলে, মানুষগুলো কোথায় যাবে? এদের তো আর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tumour Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE