Advertisement
E-Paper

বাড়ির লম্বাটে উঠোনে বসে ভাসছেন হাবিবারা

তিন দিন ধরে এক বার অন্তত ধরতে চাইছেন মনিরুল ইসলামকে। তাঁর স্বামী, বানভাসি কেরলে কোথায় কী ভাবে আছেন, তিন দিন ধরে তাঁর কোনও খোঁজ নেই।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৬
মানছে না চোখের জল। —নিজস্ব চিত্র।

মানছে না চোখের জল। —নিজস্ব চিত্র।

ছোট্ট আলফাজকে কোলে নিয়ে আছেন বটে, তবে কানে ফোনটা ধরে রেখেছেন হাবিবা খাতুন। মিনিট কয়েক অন্তর এটাই এখন বছর কুড়ির সদ্য তরুণীর কাজ— ‘যদি এক বার লাইনটা লেগে যায়’, নিজের মনেই বিড়বিড় করে চলেছেন। তিন দিন ধরে এক বার অন্তত ধরতে চাইছেন মনিরুল ইসলামকে। তাঁর স্বামী, বানভাসি কেরলে কোথায় কী ভাবে আছেন, তিন দিন ধরে তাঁর কোনও খোঁজ নেই।

বছর দুয়েকের আলফাজ মাঝে মাঝেই মায়ের কাছে বায়না ধরছে, আব্বুর সঙ্গে কথা বলতে চায় সে। অসহায় হাবিবা ছেলেকে বুকে টেনে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে, ‘‘এই বার আব্বু আসবে, আসবেই!’’ একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ইদ, টিভিতে খবর শুনছে সে—জল বাড়ছে একটু একটু করেই। টিভি বন্ধ করে ফের ফোন কানে তোলে হাবিবা। তাঁর চোখের জল গাল গড়িয়ে পড়ে আলফাজের পিঠে। কেবল হাবিবা নয়, ডোমকলের হাজারও পরিবারের মা এখন সন্তানকে এ ভাবেই বলে চলেছে— এই বার আসবে আব্বু!

ইদের আগে ডোমকলের বহু পরিবারে মাথার উপরে সঘন কালো মেঘ। বন্যা কবলিত কেরলে মৃত্যু মিছিলটা যত লম্বা হচ্ছে, ডোমকলের আকাশেও আশঙ্কার মেঘটা ততই ঘন হচ্ছে। অনেক পরিবার পরিজনদের খোঁজ পেতে ভিড় করছেন প্রশাসনের দুয়ারে।

সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা নেই। লাঠির উপরে ভর করেই ডোমকলের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের মোমিনপুর গ্রাম থেকে ডোমকল বিডিও অফিসে হাজির হয়েছেন ৭০ বছরের সালেমা বেওয়া। ছেলের আধার কার্ডটা বুকে জড়িয়ে পাক খাচ্ছেন এ দুয়ার থেকে ও দুয়ার। যাকে পাচ্ছেন কার্ডের ছবিটা দেখিয়ে বলছেন, ‘‘আমার ছেলে, একটু দ্যাখেন তো বাবা!’’

ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল নেতা টোটন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মানুষের কান্না আর দেখতে পারছি না। বৃদ্ধ বাবা মায়েদের আকুতি দেখে আমরাও বিডিও অফিসে এসেছি। তাদের পরিচয়পত্র, ঠিকানা পাঠিয়ে যদি কোনও খোঁজ মেলে তার জন্য প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরছি।’’

শনিবার কেরলের এর্নাকুলাম থেকে ট্রেনের টিকিট ছিল ডোমকলের বাবলাবোনা মাঠপাড়ার সাইফুল মণ্ডলের। কিন্তু জলবন্দি কেরলে মানুষটা ট্রেন কি ধরতে পারলেন? জানেন না, সাইফুলের বিধবা মা ফুলসুরা বেওয়া। বাড়িতে টিভি না থাকায় এর ওর বাড়িতে গিয়ে টিভির সামনে বসছেন, খবর দেখছেন আর প্রশ্ন করছেন, ‘‘খবরে কী বলল বাবা!’’

একই অবস্থা ডোমকল পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনোয়ারা বিবির। বাড়ির সামনে ভোর থেকে হাজির হচ্ছেন এলাকার বৃদ্ধ বাবা-মা। সন্তানকে কোলে নিয়ে আসছেন অসহায় স্ত্রী। মনোয়ারা বলছেন, ‘‘ঠিক ইদের আগে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে মানুষের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হচ্ছে।’’

কেউ বলছেন একমাত্র রোজগেরে ছেলে ফিরলেই ইদ হবে, না হলে ইদের দিনে জলও ছোঁব না। আবার কেউ বলছেন, ছেলেটা ফিরলেই নাতি নাতনির জামা কাপড় জুটবে। কেনা হবে ইদের মিষ্টি, সেমুই।

Kerala flood Flood বন্যা কেরল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy