Advertisement
E-Paper

মৃত্যুতেও অটুট থাকে সম্প্রীতি

রমজান মাসের কথা। রাত তখন প্রায় ১০টা। শেখপাড়া গঞ্জের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সেই সুনসান রাতে আচমকা বেজে উঠল মসজিদের মাইক— ‘বন্ধুগণ, একটি দুঃসংবাদ! শেখপাড়ার হারানচন্দ্র দাসের মৃত্যু হয়েছে। আপনাদের সকলের উদ্দেশে জানানো হচ্ছে যে, তাঁর দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:০১
আনন্দে: বহরমপুর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

আনন্দে: বহরমপুর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

রমজান মাসের কথা। রাত তখন প্রায় ১০টা। শেখপাড়া গঞ্জের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সেই সুনসান রাতে আচমকা বেজে উঠল মসজিদের মাইক— ‘বন্ধুগণ, একটি দুঃসংবাদ! শেখপাড়ার হারানচন্দ্র দাসের মৃত্যু হয়েছে। আপনাদের সকলের উদ্দেশে জানানো হচ্ছে যে, তাঁর দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনারা যাঁরা তাঁকে শেষ বারের মতো দেখতে চান, তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিন।’

হারানচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ মসজিদের মাইকে?

আজ্ঞে হ্যাঁ, সীমান্তঘেঁষা এই জনপদের এটাই দীর্ঘ দিনের রীতি। এলাকার হিন্দু-মুসলমান যাঁরই মৃত্যু হোক না কেন, সেই খবর প্রথম জানানো হয় শেখপাড়া জুম্মা মসজিদের মাইক থেকে। মোবাইল, ইন্টারনেট, ফোর-জি জমানাতেও এই রীতির কোনও বদল হয়নি।

দিন পঁচিশেক আগে শেখপাড়ার হারানচন্দ্রের মৃত্যু হয়েছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকেই তাঁর পরিবারের লোকজন মসজিদ কর্তৃপক্ষকে খবরটা জানান। তার পরে মসজিদের মাইক থেকে সেই খবর পেয়ে এলাকার লোকজন হাজির হয়েছিলেন হারানচন্দ্রের বাড়িতে।

রমজান সম্পর্কে এ তথ্যগুলি জানতেন?

হারানচন্দ্রের ছেলে মনোজকুমার দাস বলছেন, ‘‘এটাই আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি, এখানে আমরা-ওরা বলে কিছু নেই। আমরা সবাই এখানে বড় পরিবারের মতো। পুজোয় যেমন উপস্থিত হয় মসজিদ কমিটির লোকজন, তেমনি ইদেও শামিল হই আমরা। মসজিদের মাইকে এমন ঘোষণা আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক।’’

শেখপাড়া জুম্মা মসজিদের সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলছেন, ‘‘এলাকার সকলেই আমাদের পরিচিত। ফলে মৃত্যুর পরে তাঁকে শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ করে দিতে আমরা এটুকু করব না, তা আবার হয় নাকি!’’ শেখপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমেই জানতে পারি, দেশের নানা প্রান্তে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শেখপাড়া শেখপাড়াই। আমরা এখানে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই চলি।’’

শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী অচিন্ত্যকুমার সেন বলছেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগে বাবা মারা যান। আমি কিছু বলার আগে মসজিদের মাইকেই বাবার মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। মসজিদের মাইকটা ছিল বলেই বহু মানুষ সে দিন বাবাকে শেষ বারের মতো দেখতে পেয়েছিলেন। শেখপাড়ার এই সংস্কৃতিতে আমরা গর্বিত।’’

এলাকার মৌলানা মাহবুব মুরশিদ বলছেন, ‘‘শেখপাড়াকে দেখে সারা দেশ শিক্ষা নিতে পারে। চারপাশে সম্প্রীতির বড্ড অভাব। অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। আমরা চাই, শেখপাড়ার মতো মিলেমিশে থাকুক গোটা দেশ।’’

সত্যিই তো, এই সময় আরও বেশি বেঁধে বেঁধে থাকাটা যে বড্ড জরুরি।

Unity Border Areas Murshidabad Muslims Hindu Masque
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy